গর্ভাবস্থায় ডাবের পানির উপকারিতা ও অপকারিতা জেনে নিন

প্রিয় পাঠক আজকের আলোচনার বিষয় গর্ভাবস্থায় ডাবের পানির উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে। অনেকেই আছেন গর্ভাবস্থায় ডাবের পানির উপকারিতা অপকারিতা সম্পর্কে জানেন না। তাদের জন্য আজকের এই আর্টিকেলটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আজকের এই আর্টিকেলটি আপনারা মনোযোগ সহকারে পড়লে গর্ভাবস্থায় ডাবের পানির উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন।
গর্ভাবস্থায় ডাবের পানির উপকারিতা ও অপকারিতা
এই আর্টিকেলে আরো বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ টপিক বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে সেগুলো জানতে হলে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়া অনুরোধ রইলো।

ভূমিকা

ডাবের পানি বা ডাবের জল হলো কচি ডাবের ভেতরকার রস। ডাবের বৈজ্ঞানিক নাম: Cocos nucifera। ডাবের পানিতে প্রচুর পরিমাণে রয়েছে ক্লোরাইড, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, রাইবোফ্লাভিন এবং ভিটামিন সি রয়েছে।


শরীরে ইলেকট্রোলাইটস ও তরল পদার্থের পরিমাণ তৈরি হয় ডাবের পানি পান করলে। গর্ভবতী নারীদের গর্ভধারণের তৃতীয় মাস থেকেই উচিত ডাবের পানি পান করা। এই সময় পুষ্টির প্রয়োজনীয়তা সবচেয়ে বেশি। একে মা ও শিশু দুজনেই পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ হয়।

গর্ভাবস্থায় ডাবের পানির উপকারিতা

নিজের ও সন্তানের স্বাস্থ্য ধরে রাখতেই গর্ভবতী নারীদের মনোযোগী হতে হয়। গর্ভাবস্থায় শরীরে যেন পানি স্বল্পতা না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখা খুবই জরুরী। এজন্য পর্যাপ্ত পানি পান করার পাশাপাশি ডাবের পানি পান করতে পারেন। গর্ভবতী নারীদের গর্ভধারণের তৃতীয় মাস থেকেই উচিত ডাবের পানি পান করা। তাহলে চলুন জেনে নিন গর্ভাবস্থায় ডাবের পানির কি কি উপকারিতা পাওয়া যায়--

  • গর্ভাবস্থায় কোষ্ঠকাঠিন্য একটি প্রচলিত সমস্যা প্রোজেসটেরন হরমোন গর্ভাবস্থায় বেড়ে যাওয়ার কারণে এবং আয়রন সাপ্লিমেন্ট খাওয়ার কারণে সাধারণত এ সমস্যা হয়। এ সময় আঁশসমৃদ্ধ ডাবের পানি কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা কমাতে কাজ করে।
  • শিশুর মস্তিষ্ক ভালো থাকে ডাবের পানি পান করলে। গর্ভাবস্থায় থাকা মা ও শিশু দুজনের পক্ষেই ভালো। ডাবের পানি গর্ভাবস্থায় প্রতিদিন এক গ্লাস করে খাওয়াই যথেষ্ট।
  • সকালে উঠে গর্ভাবস্থায় খানিকটা দুর্বল লাগে। ডাবের পানিতে থাকে ওমেগা থ্রি, ফ্যাটি অ্যাসিড, ফাইবার। ফলে তা মা ও সন্তান দুজনের স্বাস্থ্যের পক্ষেই খুব ভালো।
  • পাঁচটি ইলেক্ট্রোলাইটের অন্তর্নিহিত উপস্থিতির কারণে শরীরের পিএইচ স্তরটি নিয়ন্ত্রিত হয় ডাবের জলে। হরমোনাল পরিবর্তনগুলি হৃদরোগের কারণ হতে গর্ভাবস্থায় যা ডাবের জলের সাথে নিয়ন্ত্রিত হতে পারে।
  • গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায় কারন ডাবের পানিতে কম চিনি বহন করে। এটি প্রত্যাশিত মায়ের প্রতিরক্ষা স্তর বাড়িয়ে মা এবং শিশুকে রক্ষা করে। কারণ এটি অত্যাবশ্যক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন গুলিতে সমৃদ্ধ ।
  • নিজেকে কর্মক্ষম রাখতে গর্ভাবস্থায় ডাবের পানি উপকারী। এর মধ্যে থাকা ইলেকট্রোলাইট উপাদানের কারণে কর্মক্ষমতা বাড়ে।
  • গর্ভাবস্থায় দেখা দেয় পানিশূন্যতার সমস্যা। ডাবের পানির মাধ্যমে আপনি সহজেই পানিশূন্যতা প্রতিরোধ করতে পারেন
  • শরীরকে সুস্থ্য রাখতে গর্ভাবস্থায় প্রচুর পানি পান করা প্রয়োজন। তাই এ সময় ডাবের পানি পান করলে তাদের শরীরে পানিশক্তি বৃদ্ধির পাশাপাশি ডিহাইড্রেশন দূর করে শরীরকে সতেজ রাখে।
  • গর্ভাবস্থায় অন্যতম একটি সমস্যা বুক জ্বালাপোড়া করা। ডাবের পানি এই সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে। হজমের সমস্যা এবং বুক জ্বালাপোড়া সমস্যা প্রতিরোধ করা সম্ভব ডাবের পানি খেলে

গর্ভাবস্থায় ডাবের পানির অপকারিতা

প্রতিটি জিনিসের ভালো ও খারাপ দুটি দিকই থাকে। সেটা আছে ডাবের পানিরও। ডাবের পানি খেতে হবে নিয়ম করে। উপকার করে বলে অপ্রয়োজনেও এটি খাওয়া যাবে না। তাতে বরং আশঙ্কা থাকে ক্ষতি হওয়ার। গর্ভাবস্থায় ডাবের পানির অপকারিতা জেনে নিন--
  • ডাবের পানি অতিরিক্ত খেলে কারও কারও ডায়রিয়া হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
  • অ্যালার্জির রোগী ডাবের পানি পানে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়তে পারেন। যাদের এলার্জি সমস্যা আছে তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ ডাবের পানি পান করবেন।
  • ডাবের পানি যেমন কিডনির উপকার করে আবার কিডনি রোগীর জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে কিডনি রোগীদের ডাবের পানি পান করা উচিত।

গর্ভাবস্থায় ডাবের শাঁস খাওয়ার উপকারিতা

গর্ভবতী মায়েদের স্বাস্থ্য ও সুস্থতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে ডাবের শাঁস। ডাবের শাঁস অসংখ্য উপকারিতা রয়েছে। গর্ভাবস্থায় ডাবের শাঁস খাওয়ার উপকারিতা রয়েছে অনেক। চলুন গর্ভাবস্থায় ডাবের শাঁস খাওয়ার উপকারিতা গুলো জেনে নেই--
  1. শরীরের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে গর্ভাবস্থায় ডাবের শাঁস প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে, যা সাহায্য করে মায়ের শক্তি এবং সুস্থতা রক্ষা করতে।
  2. গর্ভবতী মায়েদের পুষ্টির ঘাটতি পূরণ করে কারণ ডাবের শাঁসে রয়েছে পটাশিয়াম, ভিটামিন ই, ক্যালসিয়াম, এবং ম্যাগনেসিয়াম। এই উপাদানগুলি মায়ের এবং শিশুর সুস্থতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
  3. শরীরের ওজন অনেক বেশি পরিমাণে বেড়ে যায় গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মায়েদের। তাই এ সময় গর্ভবতী মায়েদের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব ডাবের শাঁস খেতে পারলে।
  4. শিশুর ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করার জন্য গর্ভবতী মহিলারা ডাবের শাঁস খেতে পারেন এটি খুবই উপকারী। 
  5. আপনার ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায় গর্ভাবস্থায় ডাবের শাঁস খেলে। রক্তের ইনসুলেট এর মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে ডাবের শাঁস। এবং শরীরের বিভিন্ন ক্ষতি রোধ করতে সাহায্য করে।
  6. কোষ্ঠকাঠিন্য গর্ভাবস্থায় একটি সাধারণ সমস্যা। ডাবের শাঁস খেলে এই সমস্যা দূর হয় এবং মায়ের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটে।
  7. ডাবের শাঁসে রয়েছে ক্যালসিয়াম। ডাবের শাঁসে থাকা ক্যালসিয়াম মায়ের হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে এবং শিশুর হাড়ের বিকাশে সাহায্য করে।
  8. অনেক বেশি পরিমাণে বেড়ে যায় গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মায়েদের খাওয়ার চাহিদা। যার ফলে ঘন ঘন খেতে ইচ্ছে করে। দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা থাকে ডাবের শাঁস খেলে যার ফলে ঘন ঘন খাওয়ার তেমন কোন প্রয়োজন পড়ে না।
  9. প্রচুর ফাইবার রয়েছে ডাবের শাঁসে। যা আপনার হজম ক্ষমতাকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি আপনার অন্ত্রকে সুস্থ রাখে এবং হজমে সাহায্য করে।
  10. অনেক খাবার রয়েছে যা খেতে সুস্বাদু হলেও হজমে সমস্যা সৃষ্টি করে। এমন কোনো সমস্যা নেই ডাবের শাঁসের ক্ষেত্রে। বরং হজমে সাহায্য করে ডাঁবের শাঁস খেলে।

সকালে খালি পেটে ডাবের পানি খেলে কি হয়

ডাবের পানি খেয়ে এক কথায় বলা হয় সুপার ড্রিংক। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে ডাবের পানি খাওয়া হয় তাহলে দারুন উপকার হয়। ডাবের পানি শরীর থেকে ক্ষতিকারক টক্সিন বের করে দেয়। চলুন জেনে নেই সকালে খালি পেটে ডাবের পানি খেলে কি হয়--
সকালে খালি পেটে ডাবের পানি খেলে কি হয়
  • দেহের প্রতিট কোণায় উপস্থিত ক্ষতিকর টক্সিক উপাদানদের বের করে দিতে ডাবের পানির কোন বিকল্প হয় না। সকালে ঘুম থেকে উঠে এক গ্লাস ডাবের পানি পান করলে নানাবিধ রোগ শরীরের ধারে কাঁছে ঘেঁষতে পারে না।
  • প্রচুর পরিমাণে পটাসিয়াম পাওয়া যায় ডাবের জলে। এছাড়াও মেলে বায়োঅ্যাক্টিভ উৎসেচক। তাই খালি পেটে ডাবের জল খেলে মেটাবলিজম বাড়ে। বাড়তি ঝরে ক্যালরি। ঝরঝরে লাগে।
  • অ্যামাইনো অ্যাসিড এবং ডায়াটারি ফাইবার ডাবের পানিতে থাকাই ইনসুলিনের কর্মক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।
  • রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে ডাবের জল খেলে। হৃদরোগজনিত সমস্যা আটকায়। ৯৪% জল থাকে ডাবের জলে। তা সম্পূর্ণ ফ্যাট ও কোলেস্টেরলমুক্ত।
  • সাইটোকিনিস নামে একটি অ্যান্টি-এজিং উপাদান রয়েছে ডাবের পানিতে। যা শরীরের উপর বয়সের ছাপ পরতে দেয় না ত্বকের সৌন্দর্য বাড়াতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

ডাব খেলে কি ঠান্ডা লাগে

গরমের সময় ডাবের পানি খাওয়া সবচেয়ে বেশি ভালো। ডাবের পানি এ সময় বেশি পানির চাহিদা পূরণ করে। ডাবের পানি তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে তাই ডাবের পানি ঠান্ডা মনে হতে পারে। এবং শারীরিক তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতেও সাহায্য করতে পারে যার ফলে অনেকেই ডাবের পানি খেলে ঠান্ডা লাগে। সর্দি কাশি জ্বর থাকলে ডাবের পানি না খাওয়াই ভালো।

আমাদের শেষ কথা

প্রিয় পাঠক আজকের এই আর্টিকেলে গর্ভাবস্থায় ডাবের পানির উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানতে পেরেছেন। আজকের এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনি যদি উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না। এতক্ষণ আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন। ''আল্লাহ হাফেজ''

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

Umme Haney'র নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url