ম্যালেরিয়া রোগের লক্ষণ গুলো বিস্তারিত ভাবে জেনে নিন
প্রিয় পাঠক আজকের এই আর্টিকেলে ম্যালেরিয়া রোগের লক্ষণ গুলো
বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব।
ম্যালেরিয়া রোগের লক্ষণ গুলো নিয়ে আপনারা হয়তো ইন্টারনেটে অনেক খোঁজাখুঁজি
করেছেন কিন্তু সঠিক তথ্য পাননি তাই আপনাদেরকে সঠিক তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করব আর
সেই জন্য আমার সম্পন্ন আর্টিকেলটি পড়ার অনুরোধ রইলো।
মশাবাহিত ভয়াবহ রোগগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ম্যালেরিয়া। ম্যালেরিয়া হল
প্লাজমোডিয়াম নামক পরজীবী দ্বারা সংঘটিত একটি মারাত্মক মশাবাহিত রোগ।
ম্যালেরিয়া রোগের লক্ষণ
এই রোগের প্রধান লক্ষণ নির্দিষ্ট সময় পরপর কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসা। এ সময় জ্বর
১০৪-১০৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত উঁঠা নামা করতে পারে। নির্দিষ্ট বিরতিতেও জ্বর
আসা যাওয়া করে। হতে পারে, একদিন পর পর জ্বর আসছে এবং তা তিন চার দিন দীর্ঘ
হওয়ার পর ঘাম দিয়ে কমে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে জ্বর ছেড়ে গেলে শরীরের তাপমাত্রা
স্বাভাবিকের চেয়েও কমে যেতে পারে। জ্বর ছাড়াও এই রোগের অন্যান্য লক্ষণগুলোর
মধ্যে আছে-
- গায়ে প্রচণ্ড ব্যথা
- মাথাব্যথা
- খিঁচুনি
- মাঝারি থেকে তীব্র কাঁপুনি বা শীত শীত অনুভব করা
- অনিদ্রা
- অত্যধিক ঘাম হওয়া
- ক্লান্তি বা অবসাদ অনুভব করা
- অ্যানিমিয়া বা রক্তশূন্যতা দেখা দেওয়া
ম্যালেরিয়া রোগের প্রতিকার ও প্রতিরোধ
ম্যালেরিয়া প্রতিরোধের জন্য এখন পর্যন্ত কার্যকর কোনো টিকা আবিষ্কৃত হয়নি। তবে এই
রোগ সম্পূর্ণ প্রতিকারযোগ্য ও প্রতিরোধযোগ্য। মশার কামড় থেকে দূরে থাকাই এই রোগ
প্রতিরোধের উপায়। অর্থাৎ মশার কামড় প্রতিরোধ করার মাধ্যমে ম্যালেরিয়া সংক্রমণ দূর
করা সম্ভব। এ জন্য কিছু করণীয় রয়েছে। যেমন-
- দিনে বা রাতে ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি বা কয়েল ব্যবহার করা।
- দরজা জানালায় মশক নিরোধক জাল, প্রতিরোধক ক্রিম, স্প্রে ব্যবহার করা।
- ঘরের আশপাশে কোথাও যেন পানি জমে মশা বংশবিস্তার না করতে পারে, সেদিকে খেয়াল রাখা বা স্থির জলাধার, জলাবদ্ধ এলাকা নিয়মিত পরিষ্কার করা।
- জমা পানিতে মশা ডিম পাড়ে বেশি। এসব স্থানে কীটনাশক বা কেরোসিন ছিটিয়ে দেওয়া।
- ম্যালেরিয়াপ্রবণ এলাকায় বেড়াতে গেলে আগে থেকেই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া বা ম্যালেরিয়া প্রতিরোধী ওষুধ সঙ্গে রাখা।
ম্যালেরিয়া রোগের কারণ
ম্যালেরিয়া হচ্ছে মশাবাহিত প্লাজমোডিয়াম পরজীবী দ্বারা সৃষ্ট রোগ। এটি কেবল
সংক্রমিত স্ত্রী অ্যানোফেলিস মশার কামড়ে হয়। এ পর্যন্ত ৬০ এর অধিক প্রজাতির
ম্যালেরিয়া পরজীবী আবিষ্কার করা সম্ভব হলেও এর মধ্যে ৪টি প্রজাতি মানুষের
ম্যালেরিয়ার জন্য দায়ী।
আরো পড়ুনঃ থাইরয়েড কি খেলে ভালো হয় বিস্তারিত জানুন
প্লাজমোডিয়াম ভাইভাক্স, ফ্যালসিপ্যারাম, ম্যালেরি ও ওভাল এর যেকোনো একটি জীবাণু
বহনকারী মশার কামড়ে ম্যালেরিয়া হতে পারে। এর মধ্যে ফ্যালসিপ্যারাম ম্যালেরিয়ার
সবচেয়ে মারাত্মক। যা মস্তিষ্কে প্রভাব ফেলে। সংক্রমিত মশা যখন কোনো ব্যক্তিকে
কামড়ায়; তখন ওই ব্যক্তির রক্তে ম্যালেরিয়ার জীবাণু প্রবেশ করে এবং সে ম্যালেরিয়ায়
আক্রান্ত হয়।
ম্যালেরিয়ার জীবাণু বহনকারী মশার নাম কি
ম্যালেরিয়া বহনকারী মশা হচ্ছে কিউলেক্স মশা এ মশা মানুষের শরীরে যদি কামড়ায়
তাহলে যে জায়গায় কামড়ায় সে জায়গায় গোটা হয়ে যায় গোটা হয়ে গিয়ে সেখানে
রক্তের সাথে মিশে যায় এবং রক্তের মাধ্যমে ভাইরাস রোগ ছড়িয়ে দিতে এবং মানুষ
অসুস্থ হয়ে যায়।
বাংলাদেশে কীটনাশক ঔষধ ব্যবহার করে। যাতে কিউলেক্স রোগটি না ছাড়ায়। এনোফিলিস
মশা মানুষের শরীরে ডেঙ্গু ম্যালেরিয়া টাইফয়েড ইত্যাদির রোগ ছড়িয়ে থাকে।
এনোফিলিস মশা যদি মানুষ কে কামড়াই তাহলে তার মরন ব্যাধি ছাড়া কিছু করার থাকে না।
ম্যালেরিয়া হলে কি খাবার খাওয়া উচিত
ম্যালেরিয়াকে মোটেও হালকাভাবে নেবেন না। যদি নেন তাহলে অ্যানোফিলিস মশার কামড়ের
যন্ত্রণা হাড়ে হাঁড়ে টের পাবেন। তখন কী করবেন।
ডাক্তারের
কাছে তো অবশ্যই যাবেন, পাশাপাশি নিজের রোজকার ডায়েটে এমন কিছু খাবার রাখবেন যা
আপনার শরীরকে শক্তি জোগাবে। এমতাবস্থায় ম্যালেরিয়া রোগীদের খাদ্যতালিকায় কী কী
জিনিস রাখা উচিত তা আজ আমরা আপনাদের বলব । যার কারণে দ্রুত পুনরুদ্ধার করা যায় ।
জাম্বুরা:
ম্যালেরিযার অব্যর্থ ওষুধ কুইনিন প্রাকৃতিকভাবেই থাকে জাম্বুরায়। এটি
ম্যালেরিযার জীবাণু ধ্বংস করে দ্রুত এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়
বহুগুণ। জাম্বুরা সেদ্ধ করে এর রস খেলে ম্যালেরিয়া সেরে যাবে দ্রুতই।
ভেষজ গুণ সম্পন্ন মশলা:
ম্যালেরিয়ার সময় আজওয়ান ভেজানো জল খেলে হজমের সমস্যা মেটে। মেথি ভেজানো পানিও পেট
ঠান্ডা করে। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে হলুদেরও জুড়ি মেলা ভার। দুধের
সঙ্গে হলুদ মিশিয়ে খাওয়ার কথাও গুরুজনেরা বলে থাকেন।
পর্যাপ্ত জল খাওয়া:
ম্যালেরিয়া থেকে দ্রুত পুনরুদ্ধারের জন্য নিজেকে হাইড্রেটেড রাখুন । এর জন্য
প্রচুর জল পান করুন । খাদ্যতালিকায় নারকেল জল, লেবুর জল এবং এই জাতীয় ফলগুলিও
অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন ৷ যেগুলিতে জলের পরিমাণ বেশি ।
আরো পড়ুনঃ ঘরোয়া পদ্ধতিতে গ্যাস্ট্রিক দূর করার উপায়
শসা, কমলার মতো এগুলি শরীর থেকে টক্সিন বের করে দিতে সাহায্য করে ৷ যাতে আপনি
দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠতে পারেন । এছাড়াও যখন ম্যালেরিয়া রোগীদের ক্ষুধা কম থাকে,
প্রচুর পরিমাণে জল পান করলে এর ক্ষতিপূরণ হয় ৷ আপনাকে শক্তি জোগায় ।
বাদাম:
ছোট্ট ছোট্ট বাদামে প্রচুর পরিমাণে শক্তির উপাদান থাকে, যা আপনার শরীরকে মজবুত
করে। এমনি না খেতে পারলে দুধ বা স্যালাডের সঙ্গে মিশিয়ে নিয়েও খেতে পারেন বাদাম।
বাদামে রয়েছে নানা ঔষধি গুণ। তবে ম্যালেরিয়ার মধ্যে বাদাম খেলে এটি শরীরকে শক্তি
দেয়ার পাশাপাশি জ্বর কমিয়ে আনতে সাহায্য করে।
ফল এবং সবজি:
ফল এবং সবজির মধ্যে অনেক গুণাগুণ উপস্থিত থাকে, যা আপনার শরীরে প্রতিরোধশক্তি
উন্নত করতে সাহায্য করতে পারে। প্রতিরোধ শক্তি উন্নত করতে আপেল, কলা, গাজর,
পেঁপে, আম, এবং অন্যান্য ফল এবং সবজি খাবার ভাল।
প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার:
ম্যালেরিয়ার ফলে শরীর ভেঙে যায়। সেরে ওঠার সময় পেশি পুনর্গঠন খুবই জরুরি। তাই এ
সময় প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া দরকার। কিন্তু প্রোটিন ও কার্বোহাইড্রেটে যেন
বজায় থাকে ভারসাম্য। ডিম, দুধ, দই, লাচ্ছির সঙ্গে সঙ্গে তেল মশলা ছাড়া সিদ্ধ করা
মাছ, মাংসের স্যুপ খাওয়া যেতে পারে। তবে অতিরিক্ত ফ্যাটসমৃদ্ধ দুগ্ধজাত খাদ্য ও
প্রক্রিয়াজাত মাংস এ সময় খাওয়া ঠিক না।
আদা:
আদার রস ম্যালেরিযার ঘন ঘন বমি হওয়ার প্রবণতাকে কমিয়ে আনে। সেইসঙ্গে এটি রোগীর
রুচিও বাড়ায়। ম্যালেরিয়া হোক বা না হোক। রোজকার খাবারের তালিকায় পুষ্টিকর খাবার
থাকলে আর নিয়ম মেনে তা খেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে।
ম্যালেরিয়া রোগের চিকিৎসা
চিকিৎসার প্রধান লক্ষ্য রোগ দ্রুত শনাক্তকরণ ও আরোগ্য লাভ। চিকিৎসা নির্ভর করে
রোগী কী ধরনের ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে, ভাইভ্যাক্স না ফ্যালসিপেরামে।
ম্যালেরিয়ার জন্য ক্লোরোকুইন সবচেয়ে কার্যকরী ওষুধ; কিন্তু পুরো কোর্স খেতে হবে।
তবে এখন আরও ভাল ভাল
ওষুধ
দেশে আছে। ম্যালেরিয়ার জটিলতা দেখা দিলে সত্বর চিকিৎসা শুরু করতে হবে। সব রকম
সুব্যবস্থা আছে এমন হাসপাতালে রোগীর চিকিৎসা করা উচিত।
ম্যালেরিয়া রোগের ঔষধের নাম
ম্যালেরিয়ার চিকিৎসা ও রোধে অনেক ঔষধ রয়েছে। কিন্তু ম্যালেরিয়ার পরজীবি
ঔষধগুলোকে প্রতিহত করার ক্ষমতা অর্জন করতে পারে, মানে হলো কোন কোন ঔষধ এই
পরজীবিগুলোকে আর মারতে পারে না। আপনার এলাকাতে কোন ঔষধটি ভাল কাজ করে তা
স্বাস্থ্য কর্মীরা, স্থানীয় স্বাস্থ্য কেন্দ্র, বা সরকারী স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ
জানে ।
সবচেয়ে কমন ম্যালেরিয়া রোগের ঔষধের নাম গুলো নিচে উল্লেখ করা হলো। তবে কোনো
অবস্থাতেই চিকিৎসকের নির্দেশনা ছাড়া ওষুধ সেবন করা যাবে না।
- chloroquine
- hydroxychloroquine
- primaquine
- artemisinin based therapy
- atovaquone proguanil
লেখকের মন্তব্য
প্রিয় পাঠক আজকের এই আর্টিকেলে ম্যালেরিয়া রোগের লক্ষণ গুলো বিস্তারিতভাবে
আলোচনা করেছি। আর্টিকেল পড়ে যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তবে আপনার বন্ধু-বান্ধব
আত্মীয়-স্বজন সবাইকে এই আর্টিকেল সম্পর্কে জানাবেন আর আমার ওয়েবসাইটের নতুন
নতুন পোস্ট আপলোড করা হয়ে থাকে আমার ওয়েবসাইটে ভিজিট করার জন্য আপনাদের প্রতি
অনুরোধ রইল।
Umme Haney'র নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url