ডেঙ্গু জ্বর হলে কি খেতে হবে বিস্তারিত ভাবে জেনে নিন
প্রিয় পাঠক, ডেঙ্গু জ্বর হলে কি খেতে হবে অনেকেই জানে না। ডেঙ্গু জ্বর হলে কি খেতে হবে যারা জানেনা তাদের জন্য আজকের এই আর্টিকেলটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আজকের এই আর্টিকেলে ডেঙ্গু জ্বর হলে কি খেতে হবে এই সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করব।
আপনার জন্য এই পোষ্টের নিচের দিকে ডেঙ্গু জ্বর সম্পর্কে আরো কিছু পয়েন্ট যোগ করা হয়েছে। সে পয়েন্ট গুলো আপনি যদি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত ভালো করে মনোযোগ সহকারে পড়েন। আশা করি তাহলে আপনি ডেঙ্গু জ্বর সম্পর্কে অজানা বিষয় গুলো বুজতে পারবেন।
ডেঙ্গু জ্বর হলে কি খেতে হবে
বর্তমানে সারাদেশে মারাত্মক রূপ ধারণ করেছে এডিস মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গু। প্রায় প্রতিদিনই আক্রান্ত হচ্ছে হাজার হাজার মানুষ আবার মারাও যাচ্ছে অনেকে। ডেঙ্গু জ্বরের উপসর্গগুলো দেখা দিলে অতি দ্রুত ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করতে হবে। সেইসঙ্গে আপনাকে খাবারের প্রতিও বিশেষভাবে মনোযোগী হতে হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে জেনে নিন, ডেঙ্গু জ্বর হলে কি খেতে হবে-
ডাবের পানি: ডেঙ্গুর জ্বর হলে শরীরে তরল পদার্থের শূন্যতা সৃষ্টি হয়। সৃষ্টি হয় ডিহাইড্রেশন। এ সময় বেশি বেশি করে ডাবের পানি পান করলে উপকার পাওয়া যাবে। কেননা ডাবে রয়েছে ইলেকট্রোলাইটসের মতো প্রয়োজনীয় পুষ্টি।
ডালিম: ডালিমে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন। সেই সঙ্গে এতে রয়েছে পরিমাণ মতো মিনারেল। যদি আপনি নিয়ম করে ডালিম খান তাহলে বেড়ে যাবে প্লেটলেটের সংখ্যা। এই উপকারী ফলটি খেলে ক্লান্তি ও অবসাদ অনুভূতিও দূর হবে।
দই: দই প্রোবায়োটিক খাবার। এতে থাকা ব্যাকটেরিয়া অন্ত্রকে ক্ষতিকর জীবাণুমুক্ত রাখতে কাজ করে। এটি রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীকে দৈনিক ১৫০ গ্রাম দই খেতে দিলে দ্রুত রোগ থেকে মুক্তি পেতে পারে।
মুরগির মাংস: ডেঙ্গু রোগীদের ক্ষেত্রে মুরগির মাংস খাওয়া উপকারী। মুরগির মাংসে থাকে যথেষ্ট প্রোটিন। এছাড়া ফ্যাট থাকে অনেক কম। যে কারণে শরীরে শক্তি পাওয়া যায় পর্যাপ্ত। মাসল লস হয় না। তাই দ্রুত সুস্থ হতে মুরগির মাংস খান। অতিরিক্ত মসলাদার নয়, অল্প মসলায় রান্না করা বা মুরগির মাংসের স্যুপ খান।
ফল: রক্তে প্লাটিলেট বাড়াতে ভিটামিন ‘সি’ এবং ‘কে’ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। লেবু, জাম্বুরা, কমলা, মাল্টার পাশাপাখি বেরি জাতীয় ফল (যেমন : স্ট্রবেরি, রাসবেরি, ব্লুবেরি) খেতে দিন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীকে।
পেঁপেপাতার রস: ডেঙ্গু রোগীদের রক্তে প্লাটিলেট বাড়াতে সাহায্য করে পেঁপেপাতার রস। খাওয়ার প্রক্রিয়াও খুব সহজ। পেঁপেপাতাকে বেটে রস বের করে নিন। কাপে করে খেতে দিন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীকে। চাইলে পেঁপেপাতা সেদ্ধ করে সেই পানিটাও খাওয়াতে পারেন।
হলুদ: রান্নাঘরের একটি উপাদান হলো হলুদ। যা চিকিৎসায় যুগ যুগ ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ডেঙ্গু জ্বর হলে এক গ্লাস দুধের সঙ্গে এক চিমটি হলুদ মিশিয়ে পান করুন। হলুদ দুধ খাওয়ার একাধিক স্বাস্থ্য উপকারিতা আছে।
সবজি: সুস্থ থাকার জন্য সবজি খাওয়ার বিকল্প নেই। সবজি খেলে শরীরে ফাইবারের ঘাটতি পূরণ হয়। ফাইবার শরীর ভালো রাখতে কাজ করে। সেইসঙ্গে সবজিতে থাকে পর্যাপ্ত ভিটামিন, খনিজ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। যে কারণে পর্যাপ্ত সবজি খেলে ডেঙ্গুকে কাবু করা সহজ হয়।
ডেঙ্গু জ্বর হলে করণীয়
১. যদি আপনার পরিবারের কেউ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হন, তাহলে নিশ্চিত করুন যে, তারা সঠিক চিকিৎসা পাচ্ছেন এবং সবসময় জটিলতার দিকে নজর রাখুন।
২. জ্বরের প্রথম দিন থেকে যদি চোখে ব্যথা, লাল চোখ বা চোখে অস্বস্তি থাকে, তার জন্য ভয় পাওয়ার কিছু নেই। ব্যথার জন্য প্যারাসিটামলই যথেষ্ট। মনে রাখতে হবে, ডেঙ্গু রোগে ব্যথা কমার জন্য প্যারাসিটামল বাদে অন্য কোন ব্যাথানাশক ওষুধ চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত গ্রহণ করা যাবে না।
৩. চার-পাঁচ দিনের মধ্যেও চোখের ব্যথা, ঝাপসা দেখা ও অস্বস্তি ইত্যাদি না কমলে চক্ষু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
৪. যেসব রোগীর রক্তে অনুচক্রিকা কম তাদের জ্বরের সাত দিনের মাথায় অন্তত একবার চোখ পরীক্ষা করানো ভালো। এছাড়া যে কোনো সময় দৃষ্টি শক্তি কমে এলে বা ঝাপসা দেখতে শুরু করলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
৫. ডেঙ্গুজনিত বেশিরভাগ চোখের সমস্যা স্বল্প মেয়াদি, তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে দীর্ঘ মেয়াদি হতে পারে এমনকি দৃষ্টিশক্তি বিনষ্ট হতে পারে। কাজেই চক্ষু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নিতে হবে।
ডেঙ্গু জ্বর হলে কি গোসল করা যাবে
অন্যান্য জ্বরের মতো ডেঙ্গু জ্বর হলেও গোসল করা যাবে। ডেঙ্গু রোগীদের পরিষ্কার ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশ থাকা অত্যন্ত জরুরি। তবে সেক্ষেত্রে ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করা যাবে না। ২৭ থেকে ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বা হালকা কুসুম পানি দিয়ে গোসল করতে হবে। এছাড়া, মাথায় পানি দিলে বা গা মুছলেও শরীরের তাপমাত্রা কমে।
অনেকেই মনে করে গোসল করলে ঠান্ডা লেগে যাবে, সর্দি কাশি হবে তাই জ্বর হলে গোসল করা যাবে না। কিন্তু বৈজ্ঞানিকভাবে গোসল করা কে সম্পূর্ণ নিষেধ করা হয় নি। এরপরেও জ্বর হলে অনেকে গোসল করে না। তবে বেশির ভাগই লোক জ্বর হলে মাথায় পানি ঢালে, জলপট্টি দেই এবং গা মুছে। যদিও এগুলো করার ফলে কিছুটা ভালো লাগে।
কিন্তু, গোসল করলে জ্বরের তীব্রতা সাময়িকভাবে আরো অনেকটা কমে আসবে। এছাড়া অস্বস্তিবোধ লাগে না। জ্বর হলে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকা গুরুত্বপূর্ণ। তাই, ডেঙ্গু জ্বর হলে গোসল করা যাবে এতে কোন সমস্যা নেই। তবে, জ্বর হলে অনেকের অতিরিক্ত ঠান্ডা লাগবে সেক্ষেত্রে শুধু মাথায় পানি দেওয়া ও গা মুছলে হবে। গোসল করার প্রয়োজন হলে কুসুম পানি দিয়ে গোসল করতে হবে। তবে খুব বেশি গরম বা খুব বেশি ঠান্ডা যাতে না হয়।
ডেঙ্গু হলে কি খাবার খাওয়া যাবে না
ডেঙ্গু হলে ডেঙ্গুর বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার পাশাপাশি ডেঙ্গু মোকাবেলায় কিছু কিছু খাবার এড়িয়ে চলা উচিত। ইতিমধ্যে উপরে আমরা ডেঙ্গু জ্বর হলে কি খেতে হবে এই সম্পর্কে বিস্তারিত হয় জানতে পেরেছে। এখন আমরা জানাবো ডেঙ্গু হলে কি খাবার খাওয়া যাবে না। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক-
তৈলাক্ত ও ভাজা খাবার:
ডেঙ্গু জ্বর হলে অবশ্যই তৈলাক্ত ও ভাজা খাবরগুলো এড়িয়ে চলা উচিত। এই খাবারগুলো খেলে উচ্চ রক্তচাপ বৃদ্ধি পেতে পারে।
মসলাদার খাবার:
ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর মসলাদার খাবার এড়িয়ে চলা উচিত। মসলাদার খাবার যকৃতে অ্যাসিড সৃষ্টি করে আলসার এমনকি যকৃতের দেয়ালে ক্ষয় তৈরি করতে পারে। এই ক্ষয়ের কারণে, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক বেশি হ্রাস পায়।
ক্যাফিনযুক্ত পানীয়:
ডেঙ্গু হলে তরল খাবার বেশি করে খেতে হবে। সেই সঙ্গে ক্যাফিনযুক্ত পানীয় এড়িয়ে চলতে হবে। এই খাবারগুলো হার্ট রেট বাড়িয়ে দিতে পারে। সেই সঙ্গে ক্লান্তি নিয়ে আসতে পারে।
চর্বিযুক্ত খাবার:
চর্বিযুক্ত খাবার ডেঙ্গু রোগীদের হজম ক্ষমতা হ্রাস করে। তাই চর্বি জাতীয় খাবার বাদ দিয়ে দিতে হবে। ডেঙ্গু হলে কি খাবার খাওয়া যাবে না আশা করি জানতে পেরেছেন।
ডেঙ্গু জ্বর কত দিন থাকে
ডেঙ্গু যেহেতু ভাইরাসজনিত জ্বর, তাই এর লক্ষণও কিন্তু ভাইরাস জ্বরের মতোই। হঠাৎ করেই প্রচণ্ড জ্বরে (১০৩-১০৪ ডিগ্রি) আক্রান্ত হন। সাথে থাকে মাথা ব্যথা, শরীর ব্যথা, জয়েন্টে ব্যথা, চোখের নিচে ব্যথা ( চোখ নড়ালে ব্যথা অনুভূত হয়)। শরীরে বা জয়েন্টে বেশি ব্যথা হয় বলে এ জ্বরের অন্য নাম ব্রেক বোন ফিভার। জ্বরের সাথে শরীরে র্যাশ বা লালচে ভাব দেখা দেয়।
সাধারণত জ্বরের দ্বিতীয় দিন থেকে ত্বক লালচে ভাব ধারণ করে। আমাদের ত্বকে র্যাশ এত ভালো বোঝা যায় না। জ্বর সাধারণত ২-৭ দিন পর কমে যায়। জ্বর কমা মানেই কিন্তু রোগ মুক্তি নয় বরং তা মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। জ্বর কমার ২-৩ দিন পরের সময় বেশি মারাত্মক। এ সময় জটিলতা দেখা দেয়। রক্তে অনুচক্রিকা কমে গেলে রক্তক্ষরণ শুরু হয়। এ সময়টাতে বেশি সচেতন থাকতে হয়।
ডেঙ্গু মশা চেনার উপায়
- এডিস ইজিপ্টাই (Aedes Aegypti) মশাই ডেঙ্গু (Dengue) ছড়ায়। এই মশা ছোট, গাঢ় ধুসর রঙের হয়। এডিস ইজিপ্টাই মশার পায়ে জালিকা বা রোঁয়া থাকে।
- এডিস ইজিপ্টাই (Aedes Aegypti) মশা বেশি উঁচুতে উড়তে পারে না। তাই দাঁড়িয়ে থাকা মানুষ বা প্রাণীর পায়ে, গোড়ালি, হাঁটুতে, কোমর বা হাতে কনুইতে বেশি কামড়ায়।
- ডেঙ্গু র মশা অর্থাৎ এডিস ইজিপ্টাই অন্যান্য মশার তুলনায় আকারে ছোট হয়।
- ডেঙ্গু র মশা অর্থাৎ এডিস মশা মূলত দিনের বেলায় কামড়ায়।
ডেঙ্গু মশা কামড়ানোর সময়
সবচেয়ে প্রচলিত তথ্য হচ্ছে, দিনের বেলায় এডিস মশা কামড়ায়। ভোর বা সূর্য ওঠার ৩-৪ ঘণ্টা পর ও বিকেল থেকে সন্ধ্যার আগ পর্যন্ত এ মশা সক্রিয় থাকে। তবে প্রাণিবিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, শুধু দিনেই নয় এডিস মশা সক্রিয় থাকে উজ্জ্বল আলোতে।
তাই ঘর আলোকিত থাকলে রাতেও কামড়াতে পারে এডিস মশা। এডিস মশা ভরদুপুরের চেয়ে আলো-আঁধারি পছন্দ করে বেশি। আর তাই ভোর বা সূর্যোদয়ের সময় কিংবা গোধূলি বা সূর্যাস্তের সময় এসি মশা বেশি কামড়ায়। তবে রাতে কৃত্রিম আলো-আঁধারিতেও এডিস মশা কামড়াতে পারে।
আমাদের শেষ কথা
প্রিয় পাঠক আজকের এই আর্টিকেলে ডেঙ্গু জ্বর হলে কি খেতে হবে এই সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আশা করছি আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনি উপকৃত হয়েছেন। আজকের এই আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই একটি কমেন্ট করে জানাবেন আর হ্যাঁ আপনি যদি এমন আর্টিকেল আরো পেতে চান তাহলে এই ওয়েবসাইটটি থেকে নিয়মিত ভিজিট করবেন ধন্যবাদ।
Umme Haney'র নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url