পিরিয়ডের সময় শসা খেলে কি হয়

প্রতিটি নারীর জন্য পিরিয়ড অনেক চ্যালেঞ্জিং। এটা নিয়ে লজ্জা বা জড়তার কিছুই নেই। এ সময় স্বাস্থ্য সুরক্ষায় কিছু খাবার খেতে হবে আবার কিছু খাবার এড়িয়ে যেতে হবে। আজকের এই আর্টিকেলে পিরিয়ডের সময় শসা খেলে কি হয় এই সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।

পিরিয়ড বা মাসিককালীন সময়ে সব নারীই কমবেশি সমস্যার মুখোমুখি হন। এ সময় শারীরিক ও মানসিক বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। পিরিয়ডের সময় শসা খেলে নানা ধরনের শারীরিক সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। শসায় উপস্থিত কিছু উপাদান এই সময় শরীরের উপর খারাপ প্রভাব ফেলে। এ সময় শসা এড়িয়ে চলুন। কারণ শসাতে রয়েছে থাকরস নামক উপাদান যা পিরিয়ডের রক্তকে জরায়ুর প্রাচীরে আটকে দিতে পারে। আর এই কারণে আপনি বন্ধ্যাও হয়ে যেতে পারেন।

উপরের অনুচ্ছেদে আমরা জানলাম পিরিয়ডের সময় শসা খেলে কি হয়। এখন জানব পিরিয়ডের সময় আইসক্রিম খেলে কি হয়। পিরিয়ডের সময় আমরা না বুঝে অনেক খাবার খেয়ে থাকি। কিন্তু অনেকেই জানিনা পিরিয়ডের সময় কোন খাবার থেকে বিরত থাকতে হয়। মেয়েদের পছন্দের খাবারে তালিকায় আইসক্রিম, চকলেট,বার্গার এইগুলা থাকে।

কিন্তু পিরিয়ডের সময় আইসক্রিম খাওয়া উচিত না। পিরিয়ডের দুধ জাতীয় খাবার যেমন, পনির, চিজ, আইসক্রিম এগুলি খুব বেশি খেতে বারন করা হয়। কারণ এই খাবার গুলির ফলে পেটে ব্যাথা বেড়ে যাবার সম্ভবনা থাকে। পেটের ভেতর অস্বস্তি বেড়ে যায়। এছাড়াও এগুলিতে বেশি ফ্যাট থাকে। আশা করা যায়, পিরিয়ডের সময় আইসক্রিম খেলে কি হয় এই বিষয়ে আপনাদের আর কোন দ্বিধা নেই।

পিরিয়ডে কলা একটি আদর্শ খাবার হতে পারে। এই খাবারটি ভিটামিন বি৬ ও পটাশিয়ামে ভরপুর। তাই দেহে খনিজ পদার্থের ভারসাম্য বজায় রাখতে নিয়মিত কলা খাওয়ার অভ্যাস করুন। কলাতে প্রচুর পরিমাণে এনার্জি আছে, যা খাওয়ার পর সঙ্গে সঙ্গে এনার্জি আসে। 

শরীরের রক্তক্ষরণের জন্য শরীর কয়েকদিন দুর্বল থাকে। তাই এই সময়ে কলা একটি ভালো পুষ্টিকর খাবার। কলা পটাশিয়ামের ও ভিটামিনের খুব ভালো উৎস, যা পিরিয়ডের সময় আপনার জন্য জরুরি। কলা পিরিয়ডের সময় বিষণ্ণতা কমাতেও সহায়ক। এই সময় প্রতিদিনকার খাদ্য তালিকায় একটি কলা রাখুন।

গবেষণায় পাওয়া গেছে যে, টক যুক্ত খাবার খেলে রক্তক্ষরণ বেশি বা কমের সাথে কোনো সম্পর্ক নেই। সেইজন্য যেকোনো টক জাতীয় খাবার খেতে পারেন এতে কোনো সমস্যা নাই। তবে মনে রাখবেন লবন যুক্ত টক জাতীয় খাবার না খাওয়াই ভালো। স্বাভাবিক অন্যান্য টক জাতীয় খাবারগুলো খাওয়া যাবে। টক জাতীয় ফলের আচার তৈরিতে প্রচুর পরিমাণে লবণ ব্যবহার করা হয়।

এই লবণের কারণে মেয়েদের মাসিকের সময় রক্তক্ষরণ হতে পারে কিংবা পেটে ব্যথা হতে পারে। এখানে মূলত টকের কারণে রক্তক্ষরণ হয় না, লবনের কারণে হয়ে থাকে। তাই একজন নারী হিসেবে মাসিকের সময় আপনাকে আরো বেশি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। অতিরিক্ত পরিমাণ লবণ দেওয়া ও প্রক্রিয়াজাত খাবার সব সময় পরিহার করতে হবে। এসব খাবার খেলে পিরিয়ডের সময় ক্ষতির কারণ হতে পারে।

পিরিয়ডের সময়টাতে প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খাদ্যতালিকায় রাখুন। ডিম একটি প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার। পিরিয়ডের সময় প্রতিদিন ডিম খাওয়ার চেষ্টা করুন। পিরিয়ডের সময় শরীরে আয়রনের পরিমাণ কমে যেতে পারে। আয়রন ঘাটতির ফলে এই সময় শরীর ব্যাথা, ক্লান্তি, মাথা ঝিমঝিম করার মতো সমস্যা দেখা দেয়।

তাই পিরিয়ড চলাকালীন আয়রন ঘাটতি রোধ করতে খাদ্যতালিকায় অবশ্যই আয়রন সমৃদ্ধ খাবার রাখতে হবে। শরীরে আয়রনের ঘাটতি পূরণ করতে পারে ডিম। তাই পিরিয়ডের সময় ডিম খাওয়া যাবে। আশা করা যায় পিরিয়ডের সময় ডিম খেলে কি হয়? এ বিষয় নিয়ে আপনাদের আর কোন দ্বিধা নেই।

পিরিয়ডের সময় এমন খাবার গ্রহণ করা উচিত যা গ্রহণে শরীর সম্পূর্ণভাবে সুস্থ ও সতেজ থাকবে। নিয়মিত পিরিয়ড হলে শরীরের হরমোনাল ব্যালেন্স ঠিক থাকে। যেসব খাবার মেন্সট্রুয়েশন সাইকেলের জন্য উপযোগী তার মধ্যে ডার্ক চকলেট অন্যতম। পিরিয়ডের সময় আয়রনের ঘাটতি দূর করতে ডার্ক চকলেটও বেশ ভালো। ডার্ক চকলেট আয়রন এবং ম্যাগনেশিয়াম সমৃদ্ধ। ডার্ক চকলেট শরীরের নার্ভ সিস্টেমকে সতেজ ও ঠাণ্ডা করে এবং মেজাজ ঠাণ্ডা করে তাই এটি পিরিয়ডের সময় খাওয়া ভালো।

পিরিয়ডের সময় দুধ খাওয়া যাবে কিনা সে প্রসঙ্গে যদি জানতে চান তাহলে অভিজ্ঞ ডাক্তারেরা এ সময় দুধ খেতে নিষেধ করে থাকেন। একটা পুষ্টিকর তরল খাবার হয়ে থাকলেও এটা অত্যন্ত ভারী খাবার এবং অনেকেই দুধ খেলে হজমের সমস্যায় ভুগে থাকেন। দুধ পানের আছে অনেক উপকারিতা। কিন্তু পিরিয়ডের সময় দুধ পান করলে অনেকের পেটে ব্যথা হতে পারে।

তাই অস্বস্তি এড়াতে এসময় দুধ পান করা থেকে বিরত থাকুন। দুধ ও দুধ জাতীয় খাবার এই সময়ে পেটে ব্যথা বাড়িয়ে তুলতে পারে। তাই এ ধরণের খাবার এই সময়ে এড়িয়ে চলুন। পিরিয়ডের সময় দুধ, চিজ বা দইয়ের মতো ডেইরি খাদ্য বেশি পরিমানে খেলে বিশেষ কিছু হরমোনের ক্ষরণ এত মাত্রায় বেড়ে যায় যে শারীরিক কষ্টের পরিমান কমতে সময় লাগে। তাই এসময় দুধ এবং তা থেকে বানানো খাবার যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে।

পিরিয়ডের সময় সাধারণত চা পান করা ভালো। চা হল একটি স্বাস্থ্যকর পানীয় যাতে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ফ্ল্যাভোনয়েড এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদান যা অনেক স্বাস্থ্য সুবিধা প্রদান করে। পিরিয়ডের সময় চা পানের অন্যতম প্রধান সুবিধা হল

এটি মাসিকের ক্র্যাম্প কমাতে সাহায্য করতে পারে। পিরিয়ডের প্রথম দুদিন অনেকেই নিজের শক্তি হারিয়ে ফেলে। চা কেবল পেটের টান এবং ব্যথা কমাতে সহায়তা করে না, এটি শক্তি পুনরুদ্ধার করতে এবং কাজ করার ক্ষমতা ফেরাতে সাহায্য করতে পারে।

সুস্বাস্থ্য ও সুস্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য পানি পান করা অপরিহার্য। প্রতিদিনই পর্যাপ্ত পানি পান করা প্রয়োজন। তবে পিরিয়ড চলাকালীন এটি বিশেষভাবে প্রয়োজন। কারণ পিরিয়ডের সময় রক্তপাতের পাশাপাশি শরীর থেকে অনেক পানি বেরিয়ে যায়। তাই এই সময় শরীরকে হাইড্রেটেড রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু আপনি কি জানেন পিরিয়ডের সময় ঠান্ডা পানি খেলে কি হয়।

পিরিয়ড চলাকালীন ঠান্ডা পানি খাওয়া উচিত নয়। সে সঙ্গে কোমল পানীয় ও নারকেল এড়িয়ে চলা উচিত। গবেষণায় দেখা গেছে, পিরিয়ড চলাকালীন ঠান্ডা পানি পান করলে পিরিয়ডের রক্ত বের না হয়ে জরায়ুর প্রাচীরে জমাট বেঁধে যায়। এভাবে ৫ থেকে ১০ বছর চলতে থাকলে তা জরায়ু টিউমার বা ক্যানসারের আকার ধারণ করতে পারে।

পিরিয়ডের সময় মাথায় শ্যাম্পু ব্যবহার না করাই ভালো। কারণ এ সময় চুলের গোড়া আলগা হয়ে থাকে। আর তাই লোমকূপ উন্মুক্ত হয়ে পড়ে। আর তাই পিরিয়ড চলাকালীন শ্যাম্পু ব্যবহার করা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এটি দীর্ঘস্থায়ী মাথাব্যথার কারণ হতে পারে।

প্রিয় পাঠক, আশা করি পিরিয়ডের সময় শসা খেলে কি হয় এই সম্পর্কে আপনারা বিস্তারিত ভাবে জানতে পেরেছেন। আমার এই পোষ্টের মাধ্যমে আপনার যদি উপকার হয় তাহলে আপনি শেয়ারের মাধ্যমে অন্যকে দেখার সুযোগ করে দিন। এতক্ষণ ধরে এই পোস্টটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। ভাল থাকবেন সুস্থ থাকবেন আল্লাহ হাফেজ।