পিরিয়ডের সময় কি কি আমল করা যায়

পিরিয়ডের সময় কি কি আমল করা যায় এ বিষয়ে অনেকেই জানতে চান। যারা এ বিষয়ে জানতে চান তাদের জন্য আমাদের আজকের এই পোস্টটি। সেজন্য ইন্টারনেটে সার্চ করে থাকেন পিরিয়ডের সময় কি কি আমল করা যায়। এটি লিখে যারা ইন্টারনেটে সার্চ করে আমাদের এখানে এসেছেন তাদের বলব সঠিক জায়গায় এসেছেন।
পিরিয়ডের সময় কি কি আমল করা যায়
পিরিয়ডের সময় কি কি আমল করা যায় এই বিষয়ে আজকের আর্টিকেলে আলোচনা করা হবে। তাই যারা এই বিষয়ে জানতে চান তারা আজকের আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে শেষ পর্যন্ত পড়তে থাকুন।

পিরিয়ডের সময় কি কি আমল করা যায়

পিরিয়ডের অবস্থায় একজন মহিলা কোন কোন আমল করতে পারে এবং এই সময় কোন আমল করতে বলা হয়েছে সে সম্পর্কে অনেকেই অজ্ঞাত রয়েছেন। আজকে আমরা কোরআন এবং হাদিসের আলোকে এই সকল আমলগুলো সম্পর্কে জানার চেষ্টা করব এবং আপনারা যারা এই সম্পর্কে জানেন না তাদের জানানোর চেষ্টা করব।


পিরিয়ডের সময় কি কি আমল করা যায় চলুন নিচের তালিকা থেকে আমরা সেগুলো সম্পর্কে জানার চেষ্টা করি। পিরিয়ড অবস্থায় নামাজ রোযা ও কুরআন শরীফ তিলাওয়াত ব্যতীত অন্যান্য আমল করতে কোন বাধা নেই। হায়েজ অবস্থায় কালিমা সমূহ পড়া যায়। অর্থাৎ কালিমা তাইয়্যেবা, শাহাদাত ও তাওহীদ ইত্যাদি।

দুরুদ শরীফ, ইস্তেগফার , চার কুল ( সূরা কাফিরুন, সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক, সূরা নাস ) ও জিকির করা জায়েজ আছে। তবে এখানে সুরা কাফিরুন এর ক্ষেত্রে কিছু ওলামায়েকেরাম বলেছেন, এটি দোয়ার অর্ন্তভুক্ত নয়। বাকি ৩ টি সুরা পড়াতে কোন সমস্যা নাই। আযানের জবাব দেওয়াও খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি আমল। হায়েজ অবস্থায় নারীরা আযানের জবাব দিতে পারবে। দিলে কোন সমস্যা হবে না।

আপনি অন্যান্য দিনের আমল গুলো পিরিয়ডের অবস্থায় পারবেন বরং এটাই উত্তম হবে। এছাড়াও পিরোয়েড অবস্থায় অনেক আমল করা যায় যেমন,

১) যত খুশি যিকির করা যায়।
২) যত খুশি ইস্তেগফার করা যায়।
৩) জাহান্নামের ভয়াবহতা নিয়ে গভীর চিন্তা করা যায়। [কারণ হায়েজ অবস্থায় সময় বেশি পাওয়া যায়]
৪) জান্নাত নিয়ে গভীর চিন্তার সাগরে ডুবে থাকা যায়।
৫) অতিমাত্রায় দুরুদ পাঠ করা যায়।
৬) দোয়া কবুলের সময়গুলোতে বেশি বেশি দোয়া করা যায়।
৭) রাতের শেষাংশে অল্প সময়ের জন্য উঠে আল্লাহ তায়ালার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা যায়।
৮) সবথেকে বড় কথা, অতিমাত্রায় দোয়া, দুরুদ- যিকির, ইস্তেগফার পাঠের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা যায় এবং নেকির পাল্লা ভারি করা যায় যা নাজাতের পথ।

পিরিয়ড চলাকালীন অবস্থায় মাসনুন দোয়া পাঠ করাতে কোন বাধা নেই। তাই আপনি এই দিনগুলোতে যখনই সময় পাবেন তখনই বেশি বেশি দোয়া করতে পারেন। বিশেষ করে পিরিয়ড চলাকালীন সময়ে অনেক অবসর পাওয়া যায়, সেই অবসরকে কাজে লাগিয়ে যদি আপনি বিভিন্ন দোয়া পড়েন তাহলে তা আপনার জন্য অনেক ভালো হবে। আশা করছি বুঝতে পারলেন পিরিয়ডের সময় কি কি আমল করা যায়।

হায়েজ অবস্থায় দরুদ পড়া যাবে কি

পিরিয়ডের সময় কি কি আমল করা যায় আশা করি তা জানতে পেরেছেন। নিচে হায়েজ অবস্থায় দরুদ পড়া যাবে কি তা নিচে বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।

নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি আমার প্রতি একবার দরুদ পাঠ করবে, আল্লাহ তার প্রতি ১০ বার রহমত বর্ষণ করবেন, ১০ টি গুনাহ মোচন করবেন এবং তার জন্য ১০ টি (মর্যাদার) স্তর উন্নীত করবেন।’’ [ইমাম নাসায়ি, আস-সুনান: ১২৯৭; ইমাম ইবনু হিব্বান, আস-সহিহ: ৯০৪; হাদিসটি সহিহ]।হায়েজ অবস্থায় দরুদ পড়া যায়। এছাড়াও জিকির-আসকার, তাসবি-ইস্তেগফার সবই করতে পারবে।

হায়েজ অবস্থায় আয়াতুল কুরসি পড়া যাবে

হায়েজ অবস্থায় দরুদ পড়া যাবে কি তা আপনারা জানতে পেরেছেন। হায়েজ অবস্থায় আয়াতুল করসি পড়া যাবে কিনা এ ব্যাপারে অনেকে বুঝতে পারেন না। হায়েজ অবস্থায় আয়াতুল কুরসি পড়তে পারবেন এতে করে কোনো সমস্যা নেই। কারণ যে সকল আয়াতের দোয়ার অর্থ রয়েছে সেগুলো সূরা হায়েজ অবস্থায়ও পড়তে পারবেন।   


আর যে সকল আয়াতের দোয়ার অর্থ নাই সেগুলো হায়েজ অবস্থায় দোয়ার উদ্দেশ্যেও পড়া জায়েজ নয়। অতএব আপনি শয়তান এর ভয়ের থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য হায়েজ অবস্থায় আয়াতুল কুরসি পড়তে পারবেন।

পিরিয়ডের সময় দোয়া কবুল হয়

পিরিয়ড চলাকালে দোয়া করতে কোনো অসুবিধা নেই। সুতরাং, উত্তম হবে—অজু করে লাইলাতুল কদরের মহান রজনীতে আন্তরিকভাবে দোয়ায় মনোনিবেশ করা। এই রাতে দোয়া কবুল হওয়ার ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। দোয়া কোনো সাধারণ বিষয় নয়। হাদিসে এসেছে, ‘‘দোয়া হলো ইবাদত।’’

আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘‘তোমরা আমাকে ডাক, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেবো। (সুরা মুমিন, ৬০) (ইমাম আবু দাউদ, আস-সুনান: ১৪৭৯)।হায়েজ অবস্থায় কালিমা সমূহ পড়া যায়। অর্থাৎ কালিমা তাইয়্যেবা, শাহাদাত ও তাওহীদ ইত্যাদি।

হায়েজ অবস্থায় নিষিদ্ধ কাজ

অনেকে হায়েজ অবস্থায় নিষিদ্ধ কাজ গুলো কি তা না জানার কারণে হায়েজ অবস্থায় অনেক ভুল কাজ করেন যা জায়েজ নয় তাই আপনাদের জানা প্রয়োজন হায়েজ বা মাসিক অবস্থায় কোন কোন কাজ গুলো করা যাবে না। তো চলুন জেনে নিন হায়েজ অবস্থায় নিষিদ্ধ কাজ কোনগুলো।

১.সালাত আদায় । (বুখারী: ৩২০, ইফা: ১৪, আধুনিক: ৩০৯)
২. রোযা রাখা। (মুসলিম: ৩৩৫)
৩. কুরআন মাজীদ গিলাফ ছাড়া স্পর্শ করা। (মুয়াত্তা মালেক: ১)
৪. মসজিদে প্রবেশ করা । (ফাতাওয়া ইসলামিয়া- ১/২৩৯)
৫. স্বামী সহবাস । (সূরা ২; বাকারা ২২২)।
৬. কাবাঘর তাওয়াফ করা। (নাসাঈ: ২৯২৯, বুখারী: ৩০৫)

হায়েজ অবস্থায় কুরআন পড়া যাবে কি

পিরিয়ডের সময় কি কি আমল করা যায় এই বিষয়গুলো সম্পর্কে ইতিমধ্যেই উপরে বিস্তারিতভাবে আলোকপাত করা হয়েছে। নিচে হায়েজ অবস্থায় কুরআন পড়া যাবে কি সে সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হবে।
হায়েজ অবস্থায় কুরআন পড়া যাবে কি
পিরিয়ড চলাকালে কোরআন স্পর্শ করবেন না। কোরআন দেখে দেখে তেলাওয়াত করা যাবে না। শুধু দুই ব্যক্তির জন্য এক্ষেত্রে আলাদা নির্দেশনা আছে। এরমধ্যে যিনি কোরআন শিক্ষা দেন, তিনি মুখস্থভাবে কোরআনের শিক্ষা দিতে পারবেন। এটা শিক্ষক হিসেবে তাঁর দায়িত্বপালন। দ্বিতীয়ত, কেউ যদি হাফেজ হন, ভুলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তখন তাঁরা মুখস্থ পড়তে পারেন।


এটা হলো যদি ভুলে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে, তখন। এটা তাঁর জন্য জায়েজ। এ দুজন ছাড়া বাকি কেউ পিরিয়ড চলাকালে কোরআন স্পর্শও করবে না, মুখস্থও পাঠ করবে না। কুরআন আল্লাহ তায়ালার পবিত্র বাণী হওয়ার কারণে মর্যাদা সম্পন্ন। 

এই মর্যাদা অক্ষুন্ন রাখতে, কোরআনে কারীমের তেলাওয়াত ও স্পর্শ করার জন্য দৈহিক পবিত্রতা অর্জন করা হয়েছে সুতরাং কোরআন তেলাওয়াত ও স্পর্শ করতে পবিত্র তা অর্জন করা জরুরী। তাই হায়েজ ও নেফাস অবস্থায় মহিলাদের জন্য কোরআন পড়া বা স্পর্শ করা কোনটাই জায়েজ নয়।

হায়েজ অবস্থায় আজানের উত্তর

পাঁচ ওয়াক্তের আজানের জবাব দেয়া মোস্তাহাব। নারী-পুরুষ সকলের জন্যই এটি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। মহিলাদের জন্যও আযানের জবাব দেওয়া মুস্তাহাব। তাই হায়েয অবস্থায়ও মহিলারা আযানের জবাব দিবে। এ অবস্থায় আযানের জবাব দিতে কোনো অসুবিধা নেই।

হায়েজ অবস্থায় সহবাস করলে কি হয়

হায়েজ অবস্থায় স্ত্রী সহবাস করলে এক নাম্বার ক্ষতি হল, আল্লাহ ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিধানকে লঙ্ঘণ করা হয়। এর চেয়ে বড় ক্ষতি আর কিছুই হতে পারে না। যে কর্মের মাধ্যমে মহান রাব্বুল আলামীন অসন্তুষ্ট হোন। তার বিধান লঙ্ঘিত হয়। এর চেয়ে ক্ষতি আর কী হতে পারে?

হায়েজ অবস্থায় স্ত্রী সহবাস করা হারাম। পবিত্র কুরআনে স্পষ্টভাবে নিষেধ করা হয়েছে। কুরআন মাজিদে ইরশাদ হয়েছে,

وَيَسْأَلُونَكَ عَنِ الْمَحِيضِ قُلْ هُوَ أَذًى فَاعْتَزِلُواْ النِّسَاء فِي الْمَحِيضِ وَلاَ تَقْرَبُوهُنَّ حَتَّىَ يَطْهُرْنَ فَإِذَا تَطَهَّرْنَ فَأْتُوهُنَّ مِنْ حَيْثُ أَمَرَكُمُ اللّهُ إِنَّ اللّهَ يُحِبُّ التَّوَّابِينَ وَيُحِبُّ الْمُتَطَهِّرِينَ

‘আর তারা তোমাকে হায়েজ সম্পর্কে প্রশ্ন করে। বল, তা কষ্ট। সুতরাং তোমরা হায়েজকালে স্ত্রীদের থেকে দূরে থাক এবং তারা পবিত্র না হওয়া পর্যন্ত তাদের নিকটবর্তী হয়ো না। অতঃপর যখন তারা পবিত্র হবে তখন তাদের নিকট আস, যেভাবে আল্লাহ তোমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন। নিশ্চয় আল্লাহ তাওবাকারীদেরকে ভালবাসেন এবং ভালবাসেন অধিক পবিত্রতা অর্জনকারীদেরকে।’(সূরা বাকারা, আয়াত: ২২২)

শেষ কথাঃ পিরিয়ডের সময় কি কি আমল করা যায়

আপনি যদি উপরে উল্লেখিত তথ্য গুলো মনোযোগের সাথে পড়ে থাকেন, তাহলে নিশ্চয়ই জানতে পেরেছেন পিরিয়ডের সময় কি কি আমল করা যায়। আশা করি আজকের পোস্টটি আপনাদের কাছে ভালো লেগেছে। এরকম আরো তথ্যমূলক আর্টিকেল পেতে আমার ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ফলো করে রাখুন ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

Umme Haney'র নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url