গর্ভাবস্থায় বাচ্চা পেটের কোন পাশে থাকে
বাচ্চার অবস্থান অনুযায়ী বাচ্চার সুস্থতা নির্ভর করে। এবং বাচ্চার যে পজিশনে বা
অবস্থানে থাকে সেই পজিশন অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ মায়ের জন্য। আজকের আলোচনার মূল
বিষয় হচ্ছে গর্ভাবস্থায় বাচ্চা পেটের কোন পাশে থাকে তা নিয়ে। বাচ্চা পেটের কোন
পাশে থাকে সঠিকভাবে জানতে আমাদের এই পোস্ট সম্পূর্ণ পড়ে নিন।
গর্ভাবস্থায় গর্ভধারিনী মা এবং তার পুরো পরিবারসহ খুব চিন্তিত থাকে যে বাচ্চা
পেটের কোন পাশে থাকে। তবে আপনি এই আর্টিকেল থেকে এসব প্রশ্নের উত্তর খুব সহজেই
পেয়ে যাবেন।
ভূমিকা
যখন কোন একজন নারী গর্ভধারণ করবেন। তখন সেই নারীর পেটের কোন পাশে বাচ্চা থাকবে তা
বিভিন্ন বিষয়ের উপর নির্ভর করে। যেমন সেই নারী শারীরিক গঠন, গর্ভের অবস্থান,
গর্ভের থাকা বাচ্চার আকার ইত্যাদি। আজকের এই আর্টিকেলটি পড়লে আপনি জানতে পারবেন
গর্ভাবস্থায় বাচ্চা পেটের কোন পাশে থাকে।
এছাড়াও এই আর্টিকেলটি পড়লে আরো জানতে পারবেন ছেলে বাচ্চা পেটের কোন দিকে থাকে,
গর্ভাবস্থায় কত মাসে পেট বড় হয়, নাভি দেখে সন্তান বুঝার উপায়, বাচ্চা বাম
পাশে থাকলে কি হয়, বাচ্চা ডান পাশে নড়াচড়া করলে কি হয়, বাচ্চার পজিশন বোঝার
উপায় এই সকল বিষয় আপনারা বিস্তারিতভাবে জানতে পারবেন।
গর্ভাবস্থায় বাচ্চা পেটের কোন পাশে থাকে
স্বাভাবিকভাবে বাচ্চা পেটের কোন পাশে থাকে তা নির্দিষ্ট অবস্থান করে বলা সম্ভব
নয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, গর্ভে থাকা অবস্থায় পেটের যেকোনো পাশে বাচ্চা থাকতে পারে।
কেননা সময়ের সাথে সাথে গর্ভে থাকা বাচ্চার আকার পরিবর্তন হয়। সেই সাথে আকার
পরিবর্তন হওয়ার পর বাচ্চাটিও নড়াচড়া করতে পারে। তবে স্বাভাবিকভাবে গর্ভধারণ
করার প্রথম দিকে
বাচ্চা পেটের মাঝখানে থাকে। যার ফলে কোন একজন গর্ভবতী নারীর জরায়ু আগে তুলনায়
অনেক বড় হতে থাকে। ঠিক সেই সময় বাচ্চাটি পেটের বিভিন্ন স্থানে নিচে নড়াচড়া
করতে পারে। প্রত্যেকের উচিত গর্ভাবস্থার শেষ মাসে ভালো করে ডাক্তারের পরীক্ষা
করা। এবং এ সময় ভালো মতো বাচ্চা দেখাশোনা করা।
অর্থাৎ এই সময় যে পজিশনে থাকলে বাচ্চা ভালো থাকে। বা যে পজিশনে সব সময় থাকে তা
হচ্ছে অ্যান্টেরিয়র পজিশন। অ্যান্টেরিয়র পজিশন হচ্ছে বাচ্চার মুখ থাকবে পিঠের
দিকে ঘোরানো অর্থাৎ বাচ্চার পিট মায়ের পিঠের দিকে। এবং মাথা থাকে নিচের
দিকে। আর এই অবস্থানেই বাচ্চা গর্ভধারিণী মায়ের পেটে থাকে।
ছেলে বাচ্চা পেটের কোন দিকে থাকে
গর্ভধারণ যেকোনো নারীর জন্য একটা সুন্দর সময়। এজন্য অনাগত সন্তানের সুস্থতার জন্য সব ধরনের মনোযোগ দেন একজন গর্ভবতী মা। অনেকেই জানতে চাই ছেলে বাচ্চা পেটের
কোন পাশে থাকে। আর যারা আসলে এই বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চান। আপনাদেরকে আগে
জানিয়ে দিচ্ছি যে পেটের পজিশন অনুযায়ী কখনো নির্ধারণ করা যায় না
আরো পড়ুনঃ এশার নামাজ কয় রাকাত - এশার নামাজের নিয়ম
যে ছেলে বাচ্চা পেটের কোন পাশে থাকে। বাচ্চা পেটের যেকোনো অবস্থানে থাকতে পারে।
সুস্থ অবস্থা বা অসুস্থ অবস্থায় বাচ্চার অবস্থান পরিবর্তন হতে পারে। গর্ভবতী
নারীর তলপেট যদি সামনের দিকে থাকে তাহলে মনে করবেন আপনার ছেলে সন্তান হবে। কিছু
লক্ষণ রয়েছে গর্ভধারী মা যদি পূর্ব থেকে বেশি সুস্থ অনুভব করে তাহলে পেটে ছেলে
বাচ্চা রয়েছে এরকম কিছু ধারণা।
গর্ভাবস্থায় কত মাসে পেট বড় হয়
প্রথমবার মা হতে যাওয়া মহিলাদের ক্ষেত্রে সাধারণত ১২-১৬ সপ্তাহের মাঝে পেট
বাড়তে থাকে। তবে আগে গর্ভধারণ করা মহিলাদের ক্ষেত্রে তা আরো আগে শুরু হতে পারে।
কারণ তাদের জরায়ু এবং পেটের বেশী আগের গর্ভধারণের কারণে প্রসারিত থাকে। গবেষকদের
মতে ১২ সপ্তাহ পর্যন্ত জরায়ু পিউবিক হাড়ের ভেতরে থাকে যার কারণে তা তেমন একটা
বোঝা যায় না
এ সময়ের পর থেকে তা মায়ের পেলভিসের বাহিরের দিকে বাড়তে থাকে। এছাড়াও মায়ের
জিনের ওপর ভিত্তি করেও পেট বোঝা যাওয়ার সময় ভিন্ন হতে পারে। পরিবারের অন্য
সদস্যদের যদি পেটের আকার বাড়তে দেরি হয়ে থাকে তবে আপনার ক্ষেত্রে এমনটা হতে
পারে। বয়সের উপরও এটা নির্ভর করতে পারে। পেট বাড়তে শুরু হওয়া দেরি হলে ঘাবড়ে
যাওয়ার কিছু নেই।
নাভি দেখে সন্তান বুঝার উপায়
গর্ভাবস্থায় নাভির আকার ফুলে ওঠা, ভেতরে ঢুকে যাওয়া, বা বাহিরের দিকে বেরিয়ে
আসা সাধারণ ঘটনা। নাভির আকৃতি ও সন্তানের লিঙ্গ নির্ধারণের জন্য একটি সাধারণ
ধারণা। নাভি যদি বাহিরের দিকে বেরিয়ে থাকে, তাহলে সন্তান ছেলে হবে বলে অনেকে মনে
করেন। নাভি যদি ভেতর দিকে ঢুকে থাকে, তাহলে সন্তান মেয়ে হবে বলে অনেকে মনে করেন।
তবে এই ধারণার বৈজ্ঞানিক কোন ভিত্তি নেই। গর্ভাবস্থায় নাভির আকার, আকৃতি এবং
অবস্থা পরিবর্তনের কারণ হলো গর্ভের বৃদ্ধি। গর্ভের বৃদ্ধির ফলে পেটের চাপ বাড়ে।
গর্ভাবস্থায় নাভির আকার আকৃতি এবং অবস্থান পরিবর্তন হলেও তা সন্তানের লিঙ্গ
নির্ধারণের জন্য সঠিক সূচক নয়। সন্তানের লিঙ্গ নির্ধারণের জন্য আল্ট্রাসনোগ্রাফি
করা উচিত।
বাচ্চা বাম পাশে থাকলে কি হয়
প্রত্যেক নারীর জীবনে এক বিশেষ সময় প্রেগনেন্সির এই নয় মাস। গর্ভের শিশুর
নড়াচড়া থেকে শিশুর সুস্থতা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ ধারণা পাওয়া যায়। সবারই
একটা জিনিস জানার কৌতূহল গর্ভের সন্তান ছেলে না মেয়ে? কিছু লক্ষণ দেখলে বোঝা
যায় গর্ভের সন্তান ছেলে হবে কি মেয়ে হবে? গর্ভের সন্তান যদি বাম পাশে থাকে
তাহলে ছেলে হবে বলে ধারণা করা হয়।
বাচ্চা ডান পাশে নড়াচড়া করলে কি হয়
একজন নারী যখন গর্ভধারণ করে তখন তার গর্ভে ছেলে সন্তান বা কন্যা সন্তান হতে পারে।
একজন নারী যখন গর্ভধারণ করে তখন তার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সময় পার করতে হয়।
শারীরিক কষ্ট সহ্য করে পাশাপাশি যখন একটা সন্তান জন্ম দান করে তখন তার জীবনের
সবচাইতে খুশির মুহূর্ত হয়ে উঠে। গর্ভাবস্থায় নির্দিষ্ট করে বলা
যাবে না সেই সন্তান বাম পাশে অবস্থান করছে নাকি ডান পাশে অবস্থান করছে। তার
নড়াচড়া উপর ভিত্তি করে সে বাম পাশের অবস্থান করতে পারে এবং ডান পাশে অবস্থান
করতে পারে। গর্ভাবস্থায় বাচ্চা যদি ডান পাশে নড়াচড়া করে তাহলে মেয়ে হবে বলে
ধরে নেওয়া হয়। গর্ভাবস্থায় নারীদের অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ সেবা দেওয়া উচিত।
বাচ্চার পজিশন বোঝার উপায়
গর্ভাবস্থায় বাচ্চার অবস্থান বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। মায়ের গর্ভে ভ্রুন বেড়ে
উঠার সাথে সাথে তার নড়াচাড়া বাড়তে থাকে এবং অবস্থান পরিবর্তন করতে থাকে।
গর্ভাবস্থার একবারে শেষ মাসে গর্ভের বাচ্চা অনেক বড় হয়ে যায় এবং তার নড়াচড়া
করার তেমন জায়গা মায়ের জরায়ুতে থাকে না। বাচ্চার পজিশন কেমন থাকে তা নিচে
উল্লেখ করে দেয়া হলো।
অ্যান্টেরিয়র পজিশনঃ অ্যান্টেরিয়র পজিশনের ক্ষেত্রে
বাচ্চার মাথা নিচের দিকে থাকে এবং তার মুখ মায়ের পিঠের দিকে ঘোরানো থাকে অর্থাৎ
বাচ্চার পিঠ থাকে মায়ের পিটের দিকে। বাচ্চার থুতনি তার বুকের সাথে লেগে এবং
বাচ্চার মাথা মায়ের পেলভিসে ঢোকার জন্য তৈরি থাকে। এই পজিশনকে সাধারণত সেফালিক
প্রেসেন্টেশান বলে।
বাচ্চা যখন গর্ভাবস্থায় শেষের দিকে নিচের দিকে নামতে থাকে তখন মায়ের
পেলভিসে অবস্থানের সবচেয়ে ভালো পজিশন হল বাচ্চার পিঠ মায়ের পিঠের দিকে থাকা।
বাচ্চা যখন এ পজিশনে থাকে তখন প্রসবের সময় তার থুতনি নিচের দিকে সমান থাকে এবং
তার মাথা সবচাইতে ছোট অংশ(মাথার উপরের ভাগ) আগে বেরিয়ে আসে।
বেশিরভাগ বাচ্চার মাথায় ৩৩-৩৬ সপ্তাহের মধ্যে মাথা নিচের দিক হয়ে যায়। যখন
গর্ভবতী মহিলার দেহ প্রসবের জন্য প্রস্তুত হয় তখন এই অবস্থানটি শিশুর পক্ষে
সবচেয়ে সেরা এবং নিরাপদ অবস্থান। এর পজিশনই হল গর্ভের বাচ্চায় সবচাইতে নিরাপদ
এবং আদর্শ অবস্থান। অ্যান্টেরিয়র পজিশন সম্পর্কে আপনারা বুঝতে
পেরেছেন।
ব্রিচ পজিশনঃ যখন কোনো মহিলার জরায়ুতে তাঁর শিশু 'মাথা উঁচু'
অবস্থানে থাকে এবং তার পা প্রসব খালের দিকে ইশারা করে থাকে, তখন শিশুর এই
অবস্থানকে ব্রিচ পজিশন বলা হয়। এই ধরনের অবস্থানের কারণে, শিশুর মাথাটি শেষে বের
হয়ে আসে যা প্রসব খালের মধ্য দিয়ে তার বেরিয়ে আসাকে জটিল করে তোলে।
এটিতে আম্বলিক্যাল কর্ড জড়িয়ে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়। যোনিপথে প্রসব করলে শিশু
আহতও হতে পারে। তিন ধরণের ব্রিচ পজিশন রয়েছে, তবে তিনটি অবস্থাতেই শিশুটি প্রসব
খালের দিকে তার শরীরের নীচের অংশ দিয়ে থাকে। নীচে তিন ধরণের ব্রিচ পজিশন দেওয়া
রয়েছে।
ফুটলিং ব্রিচ: যখন শিশুর পা দুটি নীচের দিকে প্রসব খালের দিকে ইশারা করে
থাকে, তখন তাকে ফুটলিং ব্লিচ অবস্থান বলা হয়।
ফ্রাঙ্ক ব্রিচ: যখন শিশুর পা সোজাভাবে তার শরীরের সামনের দিকে ইঙ্গিত করে,
তার পাছা প্রসব খালের মুখোমুখি হয় এবং তার পায়ের পাতা প্রায় মাথার কাছে থাকে,
তখন সে এই অবস্থানে থাকে।
কমপ্লিট ব্লিচ: এই অবস্থানে, শিশুর পাছা নীচের দিকে প্রসব খালের দিকে
নির্দেশ করে এবং পা দুটি পাছার কাছে ভাঁজ করে থাকে।
পশ্চাৎপদ অবস্থানঃ এই অবস্থানে, শিশুর মাথা নিচু থাকে, কিন্তু শিশুটি
তার পিঠের পরিবর্তে মায়ের পেটের দিকে মুখ করে থাকে। এটি প্রায়শই একটি
''সানি-সাইড-আপ'' অবস্থান হিসাবে উল্লেখ করা হয়। OP অবস্থানগুলি একটি দীর্ঘ এবং
আরও চ্যালেঞ্জিং শ্রমের দিকে পরিচালিত করতে পারে তবে প্রায়শই প্রসবের সময়
সমাধান করা যেতে পারে।
লেখক এর মন্তব্য
প্রিয় পাঠক আশা করি গর্ভাবস্থায় বাচ্চা পেটের কোন পাশে থাকে এই সম্পর্কে
বিস্তারিত ভাবে জানতে পেরেছেন। আজকের এই আর্টিকেলটি পড়ে যদি আপনি উপকৃত হয়ে
থাকেন তাহলে অবশ্যই আপনার বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিবেন। এরকম আরো নতুন নতুন
টিপস পেতে আমার ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট করুন।
আরো পড়ুনঃ লো প্রেসারে কি খাওয়া উচিত
এতক্ষণ আমাদের সাথে থেকে আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
যদি আপনারা যদি এইরকম আরো নতুন কিছু টিপস পেতে চান তাহলে অবশ্যই এই
ওয়েবসাইটটি ভিজিট করতে পারেন। ভালো
থাকবেন সুস্থ থাকবেন এবং নিয়মিত প্রসূতি মায়ের যত্ন নিবেন। আজকের মত এখানেই
বিদায় নিচ্ছি। আল্লাহ হাফেজ।
Umme Haney'র নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url