অনলাইনে কীভাবে ইনকাম করা যায়
বর্তমান যুগ আধুনিক যুগ। এই আধুনিক যুগে লাখ লাখ মানুষ অনলাইন ইনকাম এর মাধ্যমে তাদের জীবিকা নির্বাহ করছে। আজকের এই আর্টিকেলে অনলাইনে কীভাবে ইনকাম করা যায় এই সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হবে। কীভাবে অনলাইনে ইনকাম করতে হয় তার সম্পূর্ণ গাইড অনুসরণ করে আপনিও অনলাইনে ইনকাম করতে পারবেন।
প্রিয় পাঠক, আপনি যদি আজকের এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত
পড়তে পারেন তাহলে অনলাইনে কীভাবে ইনকাম করা যায় সে সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে
জানতে পারবেন।
অনলাইনে কীভাবে ইনকাম করা যায়
ইন্টারনেট মানুষের জীবনে প্রভাব ফেলেছে। মানুষ এখন অনলাইনে অর্থ আয়ের জন্য নানা
কৌশল প্রয়োগ করছে। অনলাইনে ইনকামের নানা পথ ও তৈরি হয়েছে। আধুনিক এ বিশ্বে
এখন অফিস আদালত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে প্রায় সকল ক্ষেত্রে অধিকাংশ
কাজ অনলাইনে হচ্ছে। অনলাইনে কীভাবে ইনকাম করা যায় সে সম্পর্কে আজ আপনাদের
জানাবো।
ফ্রিল্যান্সিং করে ইনকামঃ
অনলাইন আয়ের ক্ষেত্রে ফ্রিল্যান্সিং কাজ করার বিষয়টি সবচেয়ে জনপ্রিয়।
ফ্রিল্যান্সিং এর মাধ্যমে মানুষ সবচেয়ে বেশি ইনকাম করে থাকে। বাংলাদেশের
বেকারত্ব কমাতে এই খাতটি বড় ভূমিকা পালন করছে এবং সাথে সাথে অনেক দক্ষ মানুষ এই
খাতে কাজ করে আমাদের দেশকে রিপ্রেসেন্ট করেছে। বিশ্বের অনেক বড় বড় মানুষ জানতই
না যে
পৃথিবীর মানচিত্র বাংলাদেশ বলে একটি দেশ আছে। সেসব মানুষের কাছে বাংলাদেশকে
পরিচিত করেছে আমাদের দেশের ফ্রিল্যান্সারগন। সাথে সাথে প্রতিমাসে মিলিয়ন মিলিয়ন
ডলার রেমিটেন্স তারা এনে দিচ্ছে বাংলাদেশে। তাই ফ্রিল্যান্সিং এ যোগদান করে আপনি
টাকা আয় করার পাশাপাশি এই গৌরবেরও অংশীদার হতে পারেন।
আরো পড়ুনঃ Ielts ছাড়া ইউরোপের কোন কোন দেশে যাওয়া যায়
সবার প্রথমে আপনার দরকার একটি নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর দক্ষতা। এটা হতে পারে
গ্রাফিক্স ডিজাইনিং, হতে পারে ফটো এডিটিং, হতে পারে ওয়েব ডিজাইনিং, ওয়েবসাইট
মেকিং, কপি রাইটিং, কনটেন্ট রাইটিং, লোগো ডিজাইন ইত্যাদি। এসবের যে কোন একটি
বিষয়ের উপর দক্ষতা অর্জন করতে পারলে আপনি ফ্রিল্যান্সিং করতে পারবেন।
ব্লগিং করে ইনকামঃ
ব্লগিং হলো অনলাইনে আয় করার নিশ্চিত একটি উপায়। বর্তমানে ব্লগিং প্যাসিভ
ইনকামের একটি জনপ্রিয় মাধ্যম। এর জন্য প্রাথমিকভাবে আপনার ব্লগ সাইট তৈরি করতে
হবে। দুই উপায়ে ব্লগ থেকে ইনকাম করা যায়। একটি হচ্ছে নিজের ব্লগ সাইট তৈরি করে
অন্যটি হচ্ছে ওয়ার্ডপ্রেস বা টাম্বলার প্ল্যাটফর্মে বিনামূল্যে ব্লগ শুরু করতে
পারেন।
আবার চাইলে নিজে ডোমেন হোস্টিং কিনে ব্লগ চালু করতে পারেন। তবে নিজে ব্লগ চালু
করতে গেলে কিছু বিনিয়োগ করার দরকার হবে। নিজের ব্লগ শুরু করাটাই ভালো এতে করে
নিজের প্রয়োজন অনুযায়ী অনেক পরিবর্তন করার সুযোগ আসে। একটি ডট কম ডোমেন কিনবেন
সাথে ১ জিবি হোস্টিং এবং একটি ফ্রি থিম এই তিনটা জিনিসই
আপনার ব্লগিং শুরু করার জন্য যথেষ্ট। এক্ষেত্রে আপনার ২৫০০ টাকার মতো খরচ হবে।
এভাবে খরচ করে ব্লগিং করলে আপনার ব্র্যান্ডিংটা ভালো হবে এবং ইনকাম করার পরিমাণ
অনেক বেশি হবে ফ্রি সাইডের তুলনায়। আপনি মোবাইল বা কম্পিউটার উভয়ের মাধ্যমে কাজ
করতে পারবেন। ব্লগে লেখালেখি তথা বিভিন্ন আর্টিকেল পাবলিশ করা হয়ে থাকে।
পরবর্তীতে যখন অধিক সংখ্যক লোক আপনার ব্লক সাইট ভিজিট করবে তখন গুগুল অ্যাডস এর
জন্য আবেদন করবেন। তখন গুগলের দেওয়া বিজ্ঞাপনে ক্লিক থেকে আপনি অনায়াসে ইনকাম
করতে পারবেন। লেখালেখি যদি আপনার আগ্রহ থাকে, তাহলে আপনি খুব সহজে ব্লগিং সাইট
থেকে ইনকাম করতে পারবেন।
গুগল এডসেন্স থেকে ইনকামঃ
ওয়েবসাইট বা ইউটিউব থেকে অনলাইনে টাকা ইনকাম করতে হলে প্রথমে যে বিষয়টি চলে আসে সেটি হচ্ছে গুগল এডসেন্স। আপনার
যদি একটি ওয়েবসাইট বা ইউটিউব চ্যানেল থাকে, তখন সে ইউটিউব চ্যানেল অথবা ব্লগের
বিভিন্ন জায়গায় গুগল কর্তৃক এডসেন্সের বিজ্ঞাপন প্রদর্শিত হবে। আপনার সাইটের
ভিজিটররা সে বিজ্ঞাপনের উপর ক্লিক করলে
বিজ্ঞাপন থেকে আপনি একটি অংশ আয় করতে পারবেন। গুগল এডসেন্স থেকে প্রতি ক্লিকে কত
ইনকাম হয় এটাও নির্দিষ্ট নয়। যত বেশি বার কেউ বিজ্ঞাপন দেখবে তত বেশি অর্থ যোগ
হবে ওয়েবসাইট মালিকের ঝুলিতে। তবে এজন্য ব্লগ বা ওয়েবসাইটটি মান সম্মত হওয়া
জরুরী, নয়তো খুব একটা ভিউ হবে না।
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে ইনকামঃ
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং বর্তমানে সারা বিশ্বেই অনেক জনপ্রিয় একটি অর্থ উপার্জনের
মাধ্যম হয়ে উঠেছে। অনলাইন থেকে টাকা উপার্জন এর সহজ উপায় হলো অ্যাফিলিয়েট
মার্কেটিং। বাংলাদেশ আস্তে আস্তে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটার এর সংখ্যা বাড়ছে। সাধারণ মানুষের
অনেকেরই এ বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা নেই। প্রথমেই জেনে নেওয়া যাক অ্যাফিলিয়েট
মার্কেটিং কি?
আপনি যখন একটি পণ্য বা পরিষেবা প্রচার করেন, তখন তাকে মার্কেটিং বলা হয়। অনলাইনে
এই মার্কেটিং করলে সেটাকে ডিজিটাল মার্কেটিং বলা হয়। এবং আপনি যখন আপনার ডিজিটাল
মার্কেটিং দক্ষতা ব্যবহার করে অনলাইন আয়ের উদ্দেশ্যে অন্য কারো পণ্য বাজারজাত
করেন তখন তাকে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং বলে।
আরো পড়ুনঃ কোন দেশে কত ielts স্কোর লাগে
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং হল আপনার ওয়েবসাইটে অন্যের প্রোডাক্ট প্রচারের মাধ্যমে
বিক্রি করা। যার মাধ্যমে আপনার বিক্রিতে প্রোডাক্টের দাম থেকে নির্ধারিত হারে কমিশন পাবেন। আপনার ওয়েবসাইটের মাধ্যমে যত বেশি প্রোডাক্ট
বিক্রি হবে তত বেশি আয় হবে আপনার। অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর জন্য শীর্ষ
প্রতিষ্ঠান হচ্ছে অ্যামাজন।
অনলাইনে পড়িয়ে টাকা ইনকামঃ
যদি আপনার শিক্ষা বিষয়ে যথেষ্ট জ্ঞান থাকে তবে আপনিও একটি অনলাইন কোচিং সেন্টার
করে টাকা ইনকাম করতে পারেন। এই কাজের জন্য আপনার প্রয়োজন কোন বিষয়ের বিশেষ
বিশেষ জ্ঞান। মনে করেন আপনি রসায়ন বিষয়ে বিশেষ পারদর্শী, তা আপনি রসায়ন
বিষয়ের ওপর নোট তৈরি করে, কোচিং করে অনলাইন থেকে টাকা ইনকাম করতে পারেন।
গ্রাফিক্স ডিজাইন করে টাকা ইনকামঃ
অনলাইন আয়ের ক্ষেত্রে গ্রাফিক্স ডিজাইন ভালো একটি উপায়। যারা এই কাজে দক্ষ,
তারা বিভিন্ন ডিজাইন অনলাইন মার্কেটপ্লেসগুলোতে দিয়ে রাখেন। সেখান থেকে তারা
ইনকাম করতে পারেন। তাদের তৈরি একটি পণ্য অনেকবার বিক্রি হয়, অর্থাৎ একটি ভালো নকশা থেকে দীর্ঘদিন পর্যন্ত আয় হতে থাকে। অনলাইন মার্কেটপ্লেস গুলোতেও
গ্রাফিক্স ডিজাইনারদের অনেক চাহিদা রয়েছে।
স্টুডেন্ট অনলাইন ইনকাম
বর্তমান সময়ে এরকম প্রচুর অনলাইনে কাজ রয়েছে যেগুলো স্টুডেন্ট থেকে শুরু করে
বয়স্ক লোকেরাও করছেন। আর আপনি যদি কলেজে পড়া একজন স্টুডেন্ট হন তাহলে অবশ্যই
আপনার কাছে প্রচুর খালি সময় রয়েছেন। আমার পরামর্শ থাকবে এটাই যে, আপনারা অবসর
সময় গুলো নষ্ট করবেন না। তাহলে চলুন আমরা স্টুডেন্ট অনলাইন ইনকাম জেনে নেই।
ই-বুক লিখে আয় করাঃ ছাত্রদের জন্য অনলাইন ইনকামের সেরা উপায়
হতে পারে এই ই-বুক লিখা। আপনার যদি লেখালেখির উপর দক্ষতা থাকে, তবে ই-বুক লিখে
আপনি আয় করতে পারবেন সহজেই। আপনি যেকোনো বিষয়ের উপর ই-বুক লিখতে পারবেন। তবে এমন
বিষয়ে লিখার চেষ্টা করবেন,যে বিষয়ে পাঠকের আগ্রহ কাজ করে।
ফটোগ্রাফি করে আয়ঃ আপনারা চাইলে এখন খুব সহজেই ছাত্রজীবনে পড়াশোনার
পাশাপাশি ফটোগ্রাফি করে ইনকাম করতে পারবেন। আমরা প্রত্যেকেই ছবি তুলতে অনেক পছন্দ
করে থাকে বিশেষ করে ছাত্র জীবনে তো আরও বেশি আপনারা চাইলে এই ফটোগ্রাফির নেশাটি
ব্যবহার করে সেটার মাধ্যমে অনলাইন থেকে ছাত্রজীবনে ইনকাম করতে পারেন।
ইউটিউব চ্যানেল তৈরি করেঃ একটি ইউটিউব চ্যানেল তৈরি করে আজ প্রচুর
লোকেরা ঘরে বসে অনলাইনে টাকা ইনকাম করছেন। আপনি নিজের খালি সময়ে ভালো ভালো ভিডিও
বানিয়ে ইউটিউব এর মাধ্যমে লোকদের সাথে শেয়ার করতে পারবেন। এবং একবার যখন আপনার
চ্যানেল ভালো পরিমাণে সাবস্ক্রাইব হয়ে যাবে তখন আপনি বিভিন্ন মাধ্যমে নিজের
আরো পড়ুনঃ গর্ভাবস্থায় বাচ্চা পেটের কোন পাশে থাকে
ইউটিউবে চ্যানেল থেকে টাকা আয় করতে পারবেন। আজ স্কুল পড়াশোনা করে বাচ্চাদের
থেকে শুরু করে বয়স্ক লোকেরাও নিজেদের ইউটিউব চ্যানেল থেকে প্রচুর টাকা ইনকাম
করছেন। আপনি আপনার ভিডিওতে গুগল এডসেন্সের মাধ্যমে আয় করতে পারবেন আজীবন। তবে
আপনার চ্যানেলটি মোটামুটি জনপ্রিয় হলে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করেও আয় করতে পারবেন
SEO করেঃ ডিজিটাল মার্কেটিং এর খুব জনপ্রিয় একটা সেক্টর হলো
SEO। একটা সাইট গুগলের প্রথম পেজে নিয়ে আসার জন্য একটা কোম্পানি হাজার ডলার টাকা
খরচ করতেও আগ্রহি থাকে। একজন স্টুডেন্ট যদি কয়েক মাস সময় দিয়ে ঠিক ভাবে SEO
সংক্রান্ত কাজ গুলো শিখে তাহলে এই কেবল এই একটা সেক্টরে কাজ করেই একজন স্টুডেন্ট
অনলাইন ইনকাম করতে পারবে।
সরকারি অনলাইন ইনকাম
সাধারণ মানুষের হাতে স্মার্টফোন থাকলেও অনেকেই এগুলো ব্যবহার করতে জানে না
বিধায়। কম্পিউটারের দোকানে গিয়ে অনলাইন ভিত্তিক সেবাগুলো গ্রহণ করেন। তো আপনি
যখন অনলাইন ভিত্তিক সরকারি কাজগুলো করতে যাবেন। তখন এই অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে
প্রবেশ করে, জনগণের চাহিদা অনুযায়ী কাজ করে দিলে
তার বিনিময়ে ভালো টাকা ইনকাম করতে পারবেন। অনেকেই আছেন, যারা আসলে সরকারি অনলাইন
ইনকাম করার উপায় গুলো সম্পর্কে জানতে চান। তাহলে আমি আপনাকে বলবো যে, বর্তমান
সময়ে আমাদের সরকার থেকে এমন কোনো অনলাইন ইনকাম করার সিস্টেম চালু করেনি। তবে
অনলাইন থেকে যেন আমাদের দেশের মানুষ টাকা আয় করতে পারে।
সেরকম অনেক প্লাটফর্মকে আমাদের দেশের অনুমোদন দিয়েছে। নতুনবা আমাদের দেশের সরকারি
কিছু কাজ আছে। যেগুলো করার মাধ্যমেও আপনি প্রতি মাসে হাজার হাজার টাকা আয় করতে
পারবেন। যেমন-
- বয়স্ক ভাতা অনলাইন আবেদন
- বিধবা ভাতা অনলাইন আবেদন
- প্রতিবন্ধী ভাতা অনলাইন আবেদন
- গর্ভবতী ভাতা অনলাইন আবেদন
ঘরে বসে কিভাবে আয় করা যায়
বর্তমানে সবকিছুই অনলাইন প্লাটফর্মে ধাবিত হচ্ছে। তাই অনলাইনে কাজ করে আয় করার
প্রচুর সুযোগ রয়েছে। আর এই কাজ ঘরে বসে করা সম্ভব। ঘরে বসে আয় করা নিশ্চিত উপায়
রয়েছে। প্রয়োজন শুধু কাজের চাহিদা অনুযায়ী দক্ষতা অর্জন। চলুন জেনে নেওয়া যাক
অনলাইনে কীভাবে খুব সহজে ঘরে বসেই আয় করা যায়।
- ফ্রিল্যান্সিং
- ব্লগিং
- অনলাইন টিউশন
- গ্রাফিক্স ডিজাইন
- ওয়েব ডেভেলপমেন্ট
- ইউটিউব এর ভিডিও তৈরি
- অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং
- কনটেন্ট রাইটিং
- ভার্চুয়াল অ্যাসিস্টেন্ট
- SEO এক্সপার্ট
- ওয়েবসাইট ক্রয় করে
- ই-কমার্স
- ড্রপ শিপিং
- সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং
শেষ কথা
প্রিয় পাঠক অনলাইনে কীভাবে ইনকাম করা যায় এই সম্পর্কে আপনারা বিস্তারিত ধারণা
পেয়েছেন। আজকের এই আর্টিকেলটি আপনার যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনাদের
বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিবেন। এরকম আরো নতুন নতুন ইউনিক আর্টিকেল পেতে আমার
ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট করুন। এতক্ষণ সময় ধরে আর্টিকেলটি পড়ার জন্য অসংখ্য
ধন্যবাদ।
Umme Haney'র নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url