সকালে খালি পেটে মধু ও কালোজিরা খাওয়ার উপকারিতা
হাজার রোগ থেকে মুক্তির জন্য কালোজিরার গুণের কথা নিশ্চয়ই অজানা নয়! সঙ্গে মধুর স্বাস্থ্যগুনও নতুন করে বলার কিছু নেই। এই কিন্তু যাদুকারি এই উপাদান দুইটি একসঙ্গে খেলে যা হয়, তা জানলে অবাক হবেন।সকালে খালি পেটে মধু ও কালোজিরা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে অজানা কিছু অবাক করা তথ্য জানতে পুরো আর্টিকেলটি খুব মনোযোগ সহকারে পড়ার অনুরোধ রইল।
মধু ও কালোজিরা আমাদের দেহের বাহ্যিক বা অভ্যন্তরীণ সকল রোগের কাজ করে। তাই আমরা মধু ও কালোজিরা সম্পর্কে আজকের এই আর্টিকেলে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব। তাহলে চলুন শুরু করা যাক।
ভূমিকা
মধু ও কালোজিরা খাওয়ার উপকারিতা বর্ণনা করে শেষ করা যাবে না। দুটোই প্রাকৃতিক মহাওষুধ নামে পরিচিত। প্রকৃতি থেকে প্রাপ্ত উপকারী খাদ্যের মধ্যে মধু অন্যতম। হাজার বছর ধরে এটি মানুষের নিকট একটি গুরুত্বপূর্ণ খাবার। মধু একটি উপকারী তরল খাদ্য। মধু সেবনে বিভিন্ন ধরনের জটিল রোগ বলাই থেকে সহজে আরোগ্য লাভ করা যায়।
প্রাচীনকাল থেকে কালোজিরা নানার রোগের প্রতিশোধক এবং প্রতিরোধক হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। নিয়মিত কালোজিরা খেলে শরীরে প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সঠিক থাকে। এটি যেকোনো জীবাণুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে দেহকে প্রস্তুত করে তুলে এবং সার্বিকভাবে স্বাস্থ্যের উন্নতি করে।কালোজিরায় রয়েছে বিভিন্ন অলৌকিক ক্ষমতা এটি ক্যান্সার প্রতিরোধে খুব প্রয়োজনীয় হিসেবে কাজ করে।
প্রিয় পাঠক আপনি যদি এই আর্টিকেলটি পড়েন তাহলে আরো জানতে পারবেন সকালে খালি পেটে মধু ও কালোজিরা খাওয়ার উপকারিতা, প্রতিদিন কালোজিরা খেলে কি ক্ষতি হয়, মধু ও কালোজিরার হাদিস, সকালে কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম, মধু ও কালোজিরা খাওয়ার সঠিক নিয়ম, টানা ৭ দিন কালোজিরা খেলে কি হয় এই সকল বিষয়ে বিস্তারিত ভাবে জানতে পারবেন।
সকালে খালি পেটে মধু ও কালোজিরা খাওয়ার উপকারিতা
মধু ও কালোজিরার নাম শুনেনি এমন মানুষ খুব কমই আছে আমাদের বিশ্বে। সারা বিশ্বে মধু ও কালোজিরা কে ঘরোয়া ওষুধ হিসেবে সেবন করেছেন অনেকেই। কালোজিরা ও মধুতে রয়েছে অনেক পুষ্টিগুণ। ইসলাম হাদিসের মতে, মৃত্যু ব্যতীত সকল রোগের ওষুধ হচ্ছে কালোজিরা। আজকে আপনাদের জানাবো সকালে খালি পেটে মধু ও কালোজিরা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে।
মাথা ব্যথা নিরাময় করেঃ হঠাৎ মাথা ব্যথা হলে ১/২ চা চামচ কালোজিরা তেল মাথায় ভালোভাবে মালিশ করতে হবে। একটা চামচ কালোজিরা তেল ও সমপরিমাণ মধু সহ দিনে কয়েকবার করে খেতে হবে। এটা দুই সপ্তাহ খেলে ভালো হবে। এছাড়া মাথাব্যথায় কপালের উভয় চিবুকে ও কানের চারপাশে প্রতিদিন কয়েকবার কালোজিরার তেল মালিশ করলে উপকার পাওয়া যায়।
যৌনশক্তি বৃদ্ধিতেঃ দৈহিক শক্তি ও যৌনশক্তি বৃদ্ধির জন্য মধু খুবই উপকারী। প্রতিদিন মধু গরম দুধের সাথে পান করলে খুবই ভালো ফল পাওয়া যায়। প্রতিদিন কালোজিরা মধু দিয়ে চিবিয়ে খেলে বা কালোজিরা তেলের সাথে মধু মিশিয়ে খেলে অথবা দৈনিক দুই চামচ আদা রসের সাথে মধু মিশিয়ে খেলে প্রচুর পরিমাণে যৌনশক্তি বৃদ্ধি পায়।
নিদ্রাহীনতা দূর করেঃ মধু মেশানো এক গ্লাস গরম দুধের সাথে এক চামচ কালোজিরা মিশিয়ে ঘুমের পূর্বে সেবন করলে রাত্রিভর ঘুমে বিভোর। অনিদ্রা দূর হয়ে প্রচুর ঘুম আসবে নিদ্রাহীনতার রোগে কালোজিরা এবং মধু খাওয়ার উপকারিতা যেন তুলনাহীন।
হাঁপানি বা শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা দূর করেঃ হাঁপানি বা শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যা সমাধানের কালোজিরা দারুন কাজ করে। প্রতিদিন কালোজিরার ভর্তা খেলে হাঁপানি বা শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যা উপশম হয়। তাছাড়া এই সমস্যার উপশমের কালোজিরার সঙ্গে মধু খেতে পারেন।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করেঃ কালোজিরা নিম্ন রক্তচাপ বৃদ্ধি করে স্বাভাবিক করতে সাহায্য করে। পাশাপাশি দেহের কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে উচ্চ রক্তচাপ হ্রাস করে। শরীরের রক্তচাপের স্বাভাবিক মাত্রা বজায় থাকে। তাই কালোজিরা সঙ্গে মধু মিশিয়ে খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করেঃ নিয়মিত কালোজিরা ও মধু খেলে দেহে রক্ত সঞ্চালন ঠিক মত হয়। এতে করে মস্তিষ্কের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি ঘটে। যা আমাদের স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
ব্যথা নিরাময় করেঃ পিঠের ব্যথায় ভুগছেন? কালোজিরার থেকে তৈরি তেল আমাদের দেহে বাসা বাঁধার দীর্ঘমেয়াদি রিউমেটিক এবং পিঠে ব্যথা দূর করতে সাহায্য করে। এছাড়া সাধারণভাবে কালোজিরা ও মধু খেলে অনেক উপকার পাওয়া যায়।
পাইলসের সমস্যা নিরাময়ঃ পাইলসের সমস্যা নিরাময় করার জন্য প্রতিদিন রাতে এক চা চামচ কালোজিরা তেল সহ মধু খেলে পাইলসের সমস্যার সমাধান করতে সক্ষম এই কালোজিরা।
প্রতিদিন কালোজিরা খেলে কি ক্ষতি হয়
কালোজিরার বিভিন্ন স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে, আপনি যদি প্রতিদিন কালোজিরা খান তাহলে কোন ধরনের সমস্যা হবে না। তবে যদি প্রতিদিন অতিরিক্ত কালোজিরা খান তাহলে পেট খারাপ এবং বদ হজম হতে পারে। কালোজিরা মাত্রা অতিরিক্ত সেবন করলে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হতে পারে। গর্ভবতী বা বুকের দুধ খাওয়ানো মহিলাদের জন্য বা যারা নির্দিষ্ট ওষুধ গ্রহণ করেছেন তাদের জন্য সুপারিশ করা হয় না।
মধু ও কালোজিরা হাদিস
প্রিয় নবী (সা.) বলেন, মধুতে আরোগ্য নিহিত আছে। আয়েশা (রা.) বলেন, প্রিয় নবী (সা.) এর কাছে মধু ও মিষ্টান্ন খুব প্রিয় ছিল। রাসূল (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি প্রতি মাসে ৩ দিন সকালে মধু চেটে খাবে, তার বড় ধরনের কোন রোগ হবে না। ইসলামের দৃষ্টিতে রাসূল (সা.) এর যুগ থেকে মুসলমানগণ কালোজিরার ব্যাপারে গুরুত্ব প্রদান করে আসছেন।
আরও পড়ুনঃ চুল লম্বা করতে মেথির ব্যবহার
এ ব্যাপারে একটি হাদিস তাদেরকে উৎসাহিত করেছেন। হাদিসে এসেছেন রাসূল (সা.) বলেছেন তোমরা কালোজিরার ব্যাপারে গুরুত্ব প্রদান কর। কেননা মৃত্যু ব্যতীত সকল রোগের নিরাময় রয়েছে। মধু ও কালোজিরা ইত্যাদি বিভিন্ন খাদ্য গ্রহণে উৎসাহিত করে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা করা হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন,
''তার (মৌমাছির) উদর থেকে নির্গত হয় বিবিধ বর্ণের পানীয়(মধু)যাতে মানুষের জন্য রয়েছে আরোগ্য।'' হাদিসের আলোকে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (সা.) বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, কুরআন হল যে কোনও আত্মিক রোগের জন্য আর মধু হল দৈহিক রোগের জন্য। রাসুল(সা.) এর কাছে এক সাহাবী এসে তার ভাইয়ের
অসুখের কথা বললে রাসুল (সা.) তাকে মধু পান করানো পরামর্শ দেন এবং এতে সে সুস্থ হয়ে ওঠে। হযরত আনাস (সা.) বর্ণনা করেন,'' নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, যখন রোগ যন্ত্রণা খুব বেশি কষ্টদায়ক হয় তখন এক চিমটি পরিমাণ কালোজিরা নিয়ে খাবে তারপর পানি ও মধু সেবন করবে।
সকালে কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম
কালোজিরা এর গুনাগুন সম্পর্কে আপনি যদি জানেন তাহলে নিশ্চয়ই আপনি এটি নিয়মিত খেতে পারেন। প্রায় দুই হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে মানুষ খাবারের সঙ্গে কালোজিরা গ্রহণ করে আসছে। আমাদের দেহের জন্য কালোজিরার উপকারিতা অপরিহার্য। সকালে কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম গুলো চলুন জেনে নেওয়া যাক-
- কালোজিরা খাওয়া সর্বোত্তম সময় হলো খালি পেটে খাওয়ার আগে। খালি পেটে কালোজিরা খাওয়া হজমের উন্নতিতে সাহায্য করতে পারে কারণ এটি পাকস্থলীর এসিড উৎপাদন কে উদ্দীপিত করতে সাহায্য করে।
- ডায়াবেটিস রোগ উপশমে বেশ কাজে লাগে কালোজিরা। এক চিমটি পরিমাণ কালোজিরা এক গ্লাস পানির সঙ্গে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে খেয়ে দেখুন, রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
- খালি পেটে কালোজিরা খাওয়া প্রদাহ কমাতে সাহায্য করতে পারে কারণ কালোজিরাতে থাকা প্রয়োজনে ফ্যাটি এসিড শরীরের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করতে পারে।
- কালোজিরা লিভার ক্যান্সারের জন্য দায়ী আলফা টক্সিন নামক বিষ ধ্বংস করে। তাই যারা লিভার ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীদের জন্য এটি মহাওষুধ। তাই প্রতিদিন সকালে কালোজিরা খাওয়া উচিত।
- কালোজিরা মেধা বিকাশের জন্য দ্বিগুণ হারে কাজ করে। কালোজিরা নিজে একটি অ্যান্টিবায়োটিক বা অ্যান্টিসেপটিক। মস্তিষ্কের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধির মাধ্যমে স্মরণ শক্তি বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে।
- সকালে উঠে কালোজিরা খেলে শরীরকে কয়েকটি রোগ থেকে রক্ষা করে, স্মৃতিশক্তি উন্নত করে, হৃদরোগের ঝুঁকি কমায় এবং ত্বকের স্বাস্থ্য বাত এবং পেশীতে ব্যথা কমিয়ে আনতে সহায়তা করে।
মধু ও কালোজিরা খাওয়ার সঠিক নিয়ম
কালোজিরা এবং মধু একত্রে খেতে পারেন। কালোজিরার তেলের মধ্যে আপনি মধু মিশিয়ে খেতে পারেন। কালোজিরা তেল খেতে একটু অন্যরকম স্বাদের তাই এটিকে মধু মিশিয়ে নিলে ভালো হবে। এছাড়াও আপনি অন্য উপায় কালোজিরা ও মধু খেতে পারেন। কালোজিরা আর মধু একসাথে খাওয়ার একটি নিয়ম রয়েছে। কালোজিরা মধুর সাথে মিশিয়ে খেলে সর্দি কাশি কিছুটা হলেও দূর হয়।
আরও পড়ুনঃ শরীর সুস্থ রাখার খাবার তালিকা
কালোজিরা কে একটু ভেজে গুঁড়ো করে নিতে হবে।সেই গুঁড়োগুলোকে সকাল বেলা মধুর সাথে মিশিয়ে খেয়ে নিতে হবে। যদি সম্ভব হয়, তাহলে এক কাপ কুসুম কুসুম গরম দুধে দিয়ে উক্ত মিশ্রণটিকে তৈরি করে খেয়ে নিতে হবে। এতে পেটের পিড়া দূর হবে। এক্ষেত্রে অবশ্যই একটি জিনিস মনে রাখতে হবে, পরিমিত এবং সকালে খালি পেটে খেতে হবে।
টানা ৭ দিন কালোজিরা খেলে কি হয়
কালোজিরা খুব পরিচিত একটি নাম। ছোট ছোট কালো দানা গুলোর মধ্যে সৃষ্টিকর্তা যে কি বিশাল ক্ষমতা নিহিত রেখেছেন তা সত্যি বিস্মযরকর। কালোজিরার মধ্যে রয়েছে ফসফেট, লৌহ, ফসফরাস, কার্বোহাইড্রেট ছাড়াও জীবাণু নাশক বিভিন্ন উপাদান সমূহ।কালোজিরা অ্যান্টি অক্সিডেন্টে পরিপূর্ণ যা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
টানা সাত দিন কালোজিরা খেলে অনেক উপকার পাওয়া যায়। যেমন সর্দি-কাশি জ্বরের জন্য আপনি সাত দিন কালোজিরা মধু সহ খেতে থাকেন তাহলে আমরা আশা করি যে আপনার ঠান্ডার যে সমস্যা সাময়িকভাবে হয়েছিল তা দূর হয়ে যাবে। আপনি যদি নিয়মিত কালোজিরার সাথে মধু খেয়ে থাকেন তাহলে আস্তে আস্তে ঠান্ডার সমস্যা একবার দূর হয়ে যাবে।
কালোজিরা আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। নিয়মিত পেট খারাপের সমস্যা থাকলে কালোজিরা সামান্য ভেজে গুঁড়ো করে ৫০০ মিলিগ্রাম হারে ৭-৮ চা চামচ করে দুধে মিশিয়ে সকালে এবং বিকেলে সাত দিন ধরে খেলে ভালো ফল পাওয়া যায়। এসিডিটি ও গ্যাস্ট্রিক এর সমস্যায় এক কাপ দুধ ও এক বড় চামচ কালোজিরা তেল দৈনিক ৩ বার ৫-৭ দিন সেবনে আরোগ্য হয়।
লেখক এর মন্তব্য
প্রিয় পাঠক, আজকের এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনি সকালে খালি পেটে মধু ও কালোজিরা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আপনি বিস্তারিত জানতে পেরেছেন।প্রতিদিন সকালে খালি পেটে মধু ও কালোজিরা খাওয়ার অভ্যাস করলে শরীরের সকল ধরনের সমস্যার সমাধান ও স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী হবে।
আরও পড়ুনঃ দিনে কয়টা খেজুর খাওয়া উচিত
এতক্ষণ আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।এই আর্টিকেলটি যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে যারা এ বিষয়ে জানেন না দয়া করে তাদের কাছে শেয়ার করে দিন। আর নতুন নতুন আর্টিকেল পেতে এই ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট করুন। সুস্থ থাকুন, নিজেকে এবং পরিবারকে ভালবাসুন।
Umme Haney'র নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url