দিনে কয়টা খেজুর খাওয়া উচিত

প্রিয় পাঠক বন্ধুরা, সকলকে আমার ওয়েবসাইটে স্বাগতম জানাচ্ছি।খেজুরের স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে সবারই কমবেশি ধারণা রয়েছে। স্বাস্থ্যকর খাবারের মধ্যে অন্যতম খেজুর। কিন্তু অনেকেই জানে না দিনে কয়টা করে খেজুর খাওয়া উচিত। তাই আজকের এই আর্টিকেলে আপনাদের জানাবো দিনে কয়টা খেজুর খাওয়া উচিত। তাহলে চলুন বিস্তারিত হবে জেনে নেওয়া যাক।
দিনে কয়টা খেজুর খাওয়া উচিত
আপনি যদি আজকের এই আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়তে পারেন তাহলে দিনে কয়টা খেজুর খাওয়া উচিত সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানতে পারবেন। তাহলে আর দেরি কিসের চলুন শুরু করা যাক।

ভূমিকা

খেজুর সুস্বাদু আর বেশ পরিচিত একটি ফল যা ফ্রুকটোস ও গ্লাইসেমিক সমৃদ্ধ। এটির রক্তে শর্করার পরিমাণ বাড়ায়। এই ফল শক্তি, খনিজ এবং ভিটামিনের একটি দুর্দান্ত উৎস। খেজুর আবার ফাইবারে সমৃদ্ধ, যা আমাদের সুস্বাস্থ্য ও হজম শক্তি বৃদ্ধিতে উপযোগী। এতে উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট নানা রোগের সম্ভাবনাকে কম করে এবং মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে।


প্রিয় পাঠক বন্ধুরা এই আর্টিকেলটি পড়লে আপনারা আরো জানতে পারবেন দিনে কয়টা খেজুর খাওয়া উচিত,কোন খেজুর সবচেয়ে ভালো,সকালে খেজুর খাওয়ার উপকারিতা,খেজুর খাওয়ার অপকারিতা, খেজুর খাওয়ার নিয়ম,খালি পেটে খেজুর খেলে কি হয়,১০০ গ্রাম খেজুরে কত ক্যালরি এই সকল বিষয়ে আপনারা বিস্তারিতভাবে জানতে পারবেন।

দিনে কয়টা খেজুর খাওয়া উচিত 

নিয়মিত খেজুর খেলে রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে। খেজুরের মধ্যে থাকা প্রাকৃতিক সুগারের জন্য এটি খেতে খুব সুস্বাদু। খেজুরে ফ্লোরিন, ম্যাগনেসিয়াম, কোবাল্ট,বোরন,সেলেনিয়াম, ও জিংকের মত অত্যন্ত প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদান রয়েছে। যা শরীরের জন্য খুবই উপকারী। নিয়মিত খেজুর খেলে রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে।

দিনে কয়টি খেজুর খাওয়া উচিত এই নিয়ে দ্বিধায় থাকে। ফলে দিনে যদি কিছু পুষ্টিকর জিনিস নিজের ডায়েটে রাখতে চান তাহলে খেজুর রাখতে পারেন। পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ হয় দিনে অন্তত ৩টি আর সর্বোচ্চত ৬টির বেশি খেজুর খাওয়া উচিত নয় বলে মনে করেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

কোন খেজুর সবচেয়ে ভাল

কোন খেজুর সবচেয়ে ভালো এটি অনেকে জানতে চেয়ে থাকেন তো আশা করি আজকের আর্টিকেলে মাধ্যমে আপনি জানতে পারবেন কোন খেজুর সবচাইতে ভালো। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন জাতের খেজুর পাওয়া যায় এর মধ্যে কোন খেজুর সবচেয়ে ভালো এটা জানাবো।

বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় সৌদি আরবের খেজুর। কেউ সৌদি আরবে গেলে আর কিছু আনুক বা নাই আনুক খেজুর আনবেই। খেজুর কে আরবিতে তুমুর বলে। রমজান মাসে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে যেমন- মিশর, ইরাক, সৌদি আরব, দুবাই, তিউনিশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা, আলজেরিয়া সহ বিভিন্ন দেশ থেকে খেজুর আসে বাংলাদেশে।


বিশ্বের সবচেয়ে দামি খেজুর হলো আজওয়া। এটি মদিনা শরীফের সর্বোত্তম খেজুর। হযরত মোহাম্মদ(সা.) ইফতার করতেন এই খেজুর দিয়ে। এটি দেখতে কালো, বিচি ছোট এবং খেতে অত্যন্ত সুস্বাদু। তাছাড়া এই খেজুরের দাম অন্যান্য খেজুরের চেয়েও বেশি। পৃথিবীর সবচেয়ে দামি খেজুর। সহিহ বুখারি হাদিসে বলা হয়েছে, যে ব্যাক্তি প্রতিদিন সকালে সাতটি আজওয়া খেজুর খাবে, সেদিন তাকে কোন বিষ ও যাদু ক্ষতি করতে পারবে না।

সকালে খেজুর খাওয়ার উপকারিতা

স্বাস্থ্যের জন্য দারুন উপকার করে খেজুর। খেজুর খেতেও যেমন সুস্বাদু, এর স্বাস্থ্য উপকারিতা অনেক। তাই স্বাস্থ্য সচেতনদের কাছে খেজুর সুপারফুড হিসেবে বিবেচিত। সকালে খালি পেটে খেজুর খেলে নানা উপকার পাবেন আপনি। চলুন এক নজরে দেখে নেওয়া যাক সকালে খেজুর খাওয়ার উপকারিতা-

হজম ও রুচি বাড়ায়ঃ রুচি বাড়াতে খেজুরের কোন তুলনায় হয় না। শিশুদের যারা ঠিকমতো খেতে চান না, তাদেরকে নিয়মিত খেজুর খেতে দিলে রুচি ফিরে আসে। খেজুরের মধ্যে রয়েছে স্যলুবল এবং ইনস্যলুবল ফাইবার ও বিভিন্ন ধরনের অ্যামাইনো এসিড, যা সহজেই খাবার হজমের সহায়তা করে।

হার্টের সমস্যা দূর করেঃ যাদের হার্টের সমস্যা আছে, তাদের জন্য খেজুর খুবই উপকারী। কেননা খেজুর দুর্বল হার্টকে মজবুত করে। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে খেজুর খেলে হার্টের সমস্যা কিছুদিনের মধ্যে উপকার পাবেন। হৃদরোগ কমাতেও খেজুর বেশ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে।

চুলের গোড়া মজবুত করেঃ অনেক সময় চুলের উজ্জ্বলতা হারিয়ে যায়। চুলের মধ্যে একটা রুক্ষ ও শুষ্ক ভাব দেখা যায়। এ সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে খেজুর খান। কারণ খেজুরের মধ্যে যে তেল থাকে তা পুষ্টিতে পরিপূর্ণ। এটি চুলের দারুন উপকার করে। এছাড়া চুল পড়ার সমস্যা সমাধান করে খেজুর।

খুসখুসে কাশি দূর করেঃ সাধারণত যাদের খুশখুসে কাশি হয় তারা ২০-২৫ গ্রাম খেজুর,২ কাপ গরম জলে সারারাত ভিজিয়ে রাখুন। সকালে ঘুম থেকে উঠে ওই খেজুর চটকে নিয়ে শরবতের মতো করে খেলে খুসখুসে কাশি থেকে ১৫ দিনের মধ্যে উপকার পাবেন।

ওজন কমাতে সাহায্য করেঃ সকালে খালি পেটে খেজুর খেলে তা আপনাকে দেবে সারাদিন চলার শক্তি ও ক্যালরি। খালি পেটে ৪-৫টি খেজুর খেলে খিদের পরিমাণ কমে যায় ফলে অতিরিক্ত খাবার গ্রহণের প্রয়োজন হয় না। তাতে অতিরিক্ত ক্যালরি ও ফ্যাট জমা হয়ে ওজন বেড়ে যাওয়া সম্ভাবনা থাকে না।

ক্যান্সার প্রতিরোধ করেঃ খেজুর পুষ্টিগণের সমৃদ্ধ এবং প্রাকৃতিক আঁশে পূর্ণ। এক গবেষণায় দেখা যায়, খেজুর পেটের ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। আর যারা নিয়মিত খেজুর খান তাদের ক্যান্সারের ঝুঁকিটাও কম থাকে। খুব সম্প্রতি একটি গবেষণা উঠে এসেছে যে খেজুর Adbominal ক্যান্সার রোধে কার্যকর ভূমিকা পালন করে এবং অবাক করা বিষয় হচ্ছে এটি অনেক সময় ওষুধের চেয়েও ভালো কাজ করে।

গর্ভবতী মায়েদের জন্য খেজুরঃ ৭/৮ মাস সময় থেকে গর্ভবতী মায়েদের জন্য খেজুর একটি উৎকৃষ্ট খাদ্য। এ সময় গর্ভবতী মায়েদের শরীরের অনেক দুর্বলতা কাজ করে। তখন খেজুর মায়েদের শরীরে এই দুর্বলতা কাটাতে অনেক সাহায্য করে এবং ডেলিভারির পর মায়েদের অতিরিক্ত রক্তপাত বন্ধ করতে ও খেজুর সহায়ক ভূমিকা পালন করে এবং পরবর্তী সময়ে শিশুর প্রয়োজনীয় পুষ্টির জন্য মায়ের বুকের দুধ বৃদ্ধিতে খেজুর কার্যকর ভূমিকা পালন করে।

বদহজম ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করেঃ প্রতিদিন সকালে খালি পেটে খেজুর খেলে বদহজম ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়। কারণ আমরা জানি খেজুরে ফাইবার আছে যা বদহজম ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে এবং মলত্যাগকে সহজ করে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিঃ যকৃতের সংক্রমণে খেজুর উপকারী। এছাড়া গলা ব্যথা, বিভিন্ন ধরনের জ্বর, সর্দি এবং ঠান্ডায় খেজুর উপকারি। খেজুর অ্যালকোহলজনিত বিষক্রিয়ায় বেশ উপকারী। ভেজানো খেজুর খেলে বিষক্রিয়ায় দ্রুত কাজ করে। এছাড়া নিয়মিত খেজুর খাওয়ার অভ্যাসে বৃদ্ধি পায় শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও।

ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে রাখেঃ উচ্চ রক্তচাপ রোগীদের নিয়মিত খেজুর খাওয়া প্রয়োজন। কারণ খেজুরে বিদ্যমান সোডিয়াম ও পটাশিয়াম ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে উচ্চ রক্তচাপ কমায়। এবং ভালো কোলেস্টেরলের পরিমাণ বাড়ায়। এজন্য দেহে কোলেস্টরলের সমতা রক্ষার জন্য প্রতিদিন নিয়মিত খেজুর খাওয়ার অভ্যাস করত হবে।

খেজুর খাওয়ার অপকারিতা 

খেজুরের অপকারিতা নেই বললেই চলে। কারণ খেজুরে কোন ক্ষতিকর উপাদান নেই। তারপরও কোন কিছু অতিরিক্ত খাওয়া ঠিক নয়। খেজুরে অসংখ্য উপকারিতা থাকলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে খেজুর গ্রহণের সতর্ক হওয়া উচিত। যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে তারা খেজুর গ্রহণের পূর্বে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী গ্রহণ করবেন


এবং যাদের দেহে পটাশিয়ামের পরিমাণ বেশি তারা খেজুর খাবার ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করবেন। অতিরিক্ত পরিমাণে খেজুর খেলে খেজুরের মধ্যে থাকা প্রাকৃতিক চিনি শরীরে ব্লাড প্রেসার কমানোর পরিবর্তে বাড়িয়ে দিবে।

খেজুর খাওয়ার নিয়ম

খেজুর একটি উপকারী ফল এ বিষয়ে আমরা ইতিমধ্যেই জেনে গেছি। প্রতিদিন সকালবেলা খেজুর খাবেন। এতে সারা দিনের জন্য শক্তি দেহের সঞ্চিত থাকবে। এখন খেজুর খাওয়ার নিয়ম গুলো আপনাদের বিস্তারিত ভাবে জানাবো।
  • খেজুর শুকনো খাওয়ার চাইতে ভিজিয়ে খাওয়া উচিত।রাতে শোয়ার আগে এক গ্লাস জলে কয়েকটা খেজুর ভিজিয়ে রাখুন। সকালে উঠে সেই জলসহ খেজুর খান। এটা হার্টের সমস্যা ও কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে সাহায্য করবে।
  • সারাদিন এনার্জি পেতে সকালে খেজুর খেতে পারেন। ব্যায়াম করা ৩০মিনিট আগে কয়েকটি খেজুর খেতে পারেন। এতে যেমন দ্রুত হাপিয়ে যাবেন না, তেমনি পেটে থাকা দূষিত পদার্থ দূর হবে।
  • রাত্রে ঘুমানোর আগে খেজুর খেতে পারেন। রাতে ঘুমানোর আগে খেজুর খেলে সারা দিনে ক্লান্তি খুব সহজেই দূর হয়ে যায়। এবং সকালে শরীর সতেজ থাকে।
  • দুধ ফোটানোর সময় দুইটি করে খেজুর দিয়ে দিবেন। তারপর খালি পেটে একটি নির্দিষ্ট সময় ধরে এই দুধ খাবেন। স্বাস্থ্যকর এই খাবারটি টানা ১০ দিন খেলে রক্তস্বল্পতা,ঘুমের সমস্যা ইত্যাদি দূর হবে। খেজুর মেশানো হালকা গরম দুধ রাতে ঘুমের আগে খেলেও ভালো ফল পাওয়া যাবে।

খালি পেটে খেজুর খেলে কি হয়

খেজুরে ভালো পরিমাণে আয়রন পাওয়া যায়, যা শরীরে হিমোগ্লোবিন বাড়ায়। শরীর রক্ত সরবরাহ করে। খালি পেটে খেজুর খেলে শরীরের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বেড়ে যায়।অনেক সময় বয়স বাড়ার ফলে মুখের চামড়া কুঁচকে যায়। খেজুরে ভিটামিন বি রয়েছে যা ত্বকের পক্ষে অত্যন্ত উপকারী।


প্রতিদিন সকালে খালি পেটে ৪-৫টি খেজুর নিয়ম করে খান। দেখবেন আস্তে আস্তে দাগ মিলিয়ে যাবে।খেজুরে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে যা হজম স্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজনীয়। তাই সকালে খালি পেটে খেজুর খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়।

১০০ গ্রাম খেজুরে কত ক্যালরি

পুষ্টিবিদ নুজহাত মঞ্জুর বলেন,ওজন বাড়াতে খেজুরের জুড়ি নেই। একটি খেজুর থেকে আমরা ২৩ কিলোক্যালরি পেয়ে থাকি। ১০০ গ্রাম খেজুর থেকে আমরা ২৮২ কিলোক্যালরি পায়। এ থেকে আমরা বুঝতে যে অল্প পরিমাণ খাবার থেকে যথেষ্ট ক্যালোরি পেতে পারি। যারা ওজন বাড়াতে চান বা পেশী বৃদ্ধি করতে চান, তারা খেজুর খেতে পারেন।

আমাদের শেষ কথা

প্রিয় পাঠক, আশা করি পুরো আর্টিকেলটি আপনি মনোযোগ সহকারে পড়েছেন।দিনে কয়টি খেজুর খাওয়া উচিতএই সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানতে পেরেছেন।আজকের এই আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন।এই ওয়েবসাইটের আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই এই ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

Umme Haney'র নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url